নবরাত্রি মানে কি: দূর্গা পূজার ও নবরাত্রির মাহাত্ম্য, দেবীর নয়টি রূপের পূজো।

Written by Bikrom Das

Published on:

বন্ধুরা, আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি নবরাত্রি মানে কি এই বিষয়ে সম্পূর্ন বিস্তারিত জানতে পারবেন। দুর্গাপুজোকে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়। সারা বছর ধরে বাঙালি সমাজ এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে। আর কয়েকদিন পরেই দুর্গাপুজোর মঙ্গলময় আনন্দে মেতে উঠবে সবাই। ঢাকের আওয়াজ, শিউলি ফুলের গন্ধ আর কাঁসর-ঘণ্টার আওয়াজে পূর্ণ হবে চারপাশ।

বাংলা ক্যালেন্ডারের আশ্বিন মাসের শারদপ্রাতে দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসেন সন্তানদের নিয়ে। বাঙালিরা যখন দুর্গাপুজোর আনন্দে মগ্ন, ঠিক সেই সময়ে ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে বিশেষ করে গুজরাটে, মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে এবং ব্যাঙ্গালোরে নবরাত্রি পালিত হয়। এই নবরাত্রি উৎসব দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা উদযাপন করে। এই নয়টি রূপে দেবীকে আরাধনা করা হয় শক্তির বিভিন্ন রূপের প্রতীক হিসেবে

নবরাত্রি মানে কি

নবরাত্রি শব্দের অর্থ “নয় রাতের উৎসব“। এই উৎসবের সময় দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজো করা হয়। প্রতিটি রূপ শক্তি, সাহস, এবং প্রতিকূলতা জয়ের প্রতীক। নবরাত্রি উৎসবে দেবীর ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজিতা হওয়া বাঙালি সমাজের মতোই গুজরাট, মহারাষ্ট্র, এবং কাশ্মীরের মানুষেরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে এই উৎসবটি পালন করেন।

দেবীর নয়টি রূপের আরাধনা

দেবী দুর্গার নয়টি রূপের প্রতীকী ছবি
দেবী দুর্গার নয়টি রূপের প্রতীকী ছবি

নবরাত্রির নয়টি দিন নয়জন দেবীর প্রতীকী রূপে পূজিতা হন। এই রূপগুলোর প্রতিটি আলাদা শক্তি ও গুরুত্ব বহন করে। নিচে প্রতিটি দেবীর নাম এবং তাঁদের মাহাত্ম্য আলোচনা করা হলো।

দিনদেবীর নামপ্রতীক এবং মাহাত্ম্য
প্রথম দিনশৈলপুত্রীদেবী পার্বতীর এই রূপ হিমালয়ের কন্যা হিসেবে পূজিতা হন। তিনি ত্রিশূল ধারণ করেন এবং পদ্মফুল হাতে বৃষ-এর ওপর অধিষ্ঠিত থাকেন।
দ্বিতীয় দিনব্রহ্মচারিণীদেবী এই রূপে রুদ্রাক্ষ মালা এবং কমন্ডলু হাতে নিয়ে খালি পায়ে হাঁটেন। তিনি কঠোর তপস্যার প্রতীক।
তৃতীয় দিনচন্দ্রঘণ্টাদেবী চন্দ্রঘণ্টার কপালে অর্ধচন্দ্র আছে এবং তাঁর দশটি হাত থাকে। তিনি বাঘের পিঠে অধিষ্ঠান করেন।
চতুর্থ দিনকুষ্মাণ্ডাএই দেবী মহাবিশ্বের স্রষ্টা হিসেবে পূজিতা হন। তাঁর পূজায় মালপোয়া বিশেষ প্রসাদ হিসেবে নিবেদন করা হয়।
পঞ্চম দিনস্কন্দমাতাস্কন্দমাতা পদ্মফুল এবং ঘণ্টা ধারণ করেন। তাঁর প্রিয় ফল কলা।
ষষ্ঠ দিনকাত্যায়নীসিংহবাহিনী দেবী কাত্যায়নীকে মধু নিবেদন করা হয়। তিনি ঋষি কাত্যায়নের কন্যা।
সপ্তম দিনকালরাত্রিদেবী কালরাত্রি শ্যামবর্ণা এবং তাঁর বাহন গাধা। তাঁকে গুড় নিবেদন করা হয়।
অষ্টম দিনমহাগৌরীদেবী মহাগৌরীকে নারকেল নিবেদন করা হয়। তিনি শুভ্র এবং শান্তির প্রতীক।
নবম দিনসিদ্ধিধাত্রীসিদ্ধিধাত্রী দেবী পরিপূর্ণতার প্রতীক। তাঁর পূজায় তিল নিবেদন করা হয়।

দুর্গাপুজো ও নবরাত্রির পার্থক্য

দুর্গাপুজো সাধারণত বাঙালির প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এদিকে নবরাত্রি গুজরাট ও অন্যান্য প্রদেশে বেশিরভাগই পালিত হয়। তবে, উভয় উৎসবই দেবী দুর্গার শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপকে আরাধনা করে। নবরাত্রির প্রতিদিন আলাদা দেবী আরাধনা করা হয়, যেখানে দুর্গাপুজোর প্রধান দেবী দুর্গাই। এই দুই উৎসবের মধ্যে বিশেষ বৈচিত্র্য থাকলেও উভয়ই শক্তির আরাধনায় উৎসর্গীকৃত।

গরবা এবং দান্ডিয়া নাচের ছবি
গরবা এবং দান্ডিয়া নাচের ছবি

নবরাত্রি পালন বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্নভাবে হয়। গুজরাটে এই সময়ে গরবা নৃত্য বিশেষ জনপ্রিয়। এটি গুজরাটের একটি প্রধান নৃত্যশৈলী যেখানে নারীরা ঘুরে ঘুরে নৃত্য করেন। এছাড়াও দান্ডিয়া নৃত্য নবরাত্রির সময় খুবই পরিচিত। গুজরাট ছাড়াও মহারাষ্ট্রে এবং উত্তর ভারতে বিশেষ আড়ম্বরে নবরাত্রি উদযাপন করা হয়।

নবরাত্রিতে দেবী দুর্গার নয়টি রূপকে পূজো করা হয়। দেবীর এই নয়টি রূপের মধ্যে প্রতিটি রূপের আলাদা মাহাত্ম্য এবং প্রতীকী অর্থ রয়েছে। দেবী শৈলপুত্রী শক্তির প্রতীক, ব্রহ্মচারিণী ধৈর্য্যের প্রতীক, চন্দ্রঘণ্টা সাহসের প্রতীক, কুষ্মাণ্ডা সৃষ্টির প্রতীক, স্কন্দমাতা মমতার প্রতীক, কাত্যায়নী শুদ্ধতার প্রতীক, কালরাত্রি ধ্বংসের প্রতীক, মহাগৌরী শান্তির প্রতীক, এবং সিদ্ধিধাত্রী পরিপূর্ণতার প্রতীক।

দূর্গা পূজা কত তারিখে ২০২৫

দুর্গাপুজোর সময় সাধারণত চারদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, এবং দশমী। তবে নবরাত্রি চলে নয়দিন ধরে। উভয় উৎসবেই দেবীর শক্তির পূজো হয়, কিন্তু রীতিনীতিতে কিছু পার্থক্য রয়েছে।

প্রতিটি দিন দেবীর জন্য নির্দিষ্ট প্রসাদ নিবেদন করা হয়। দেবী কুষ্মাণ্ডার জন্য মালপোয়া, দেবী স্কন্দমাতার জন্য কলা, দেবী কালরাত্রির জন্য গুড়, মহাগৌরীর জন্য নারকেল এবং সিদ্ধিধাত্রীর জন্য তিল নিবেদন করা হয়। প্রতিটি প্রসাদ দেবীর পূজার একটি অপরিহার্য অংশ এবং এই প্রসাদগুলো বিশেষ ভাবে দেবীর মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়।

নবরাত্রি শেষ হলে দশেরা উৎসব পালিত হয়। এটি রাবণের বিরুদ্ধে রামচন্দ্রের বিজয় স্মরণ করে। এই উৎসবকে ভালো শক্তির দ্বারা মন্দ শক্তির দমন হিসেবে গণ্য করা হয়। নবরাত্রির শেষে দশেরা উপলক্ষ্যে রাবণের কুশপুতুল দাহ করা হয়, যা মন্দ শক্তির বিনাশের প্রতীক।

শেষ কথা

নবরাত্রি এবং দুর্গাপুজো দুইটাই দেবী দুর্গার পূজো এবং শক্তির মহিমা উদযাপন করার উৎসব। উভয় উৎসবেই ভক্তরা দেবীর ভিন্ন ভিন্ন রূপের পূজো করে শক্তি, সাহস, এবং ধৈর্যের আরাধনা করেন। তবে, তাদের রীতিনীতিতে আঞ্চলিক ভিন্নতা আছে। তা সত্ত্বেও, দেবীর শক্তির প্রতি ভক্তির প্রতিফলন সবার মধ্যে এক।

আমি বহু-বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছি। আমি বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, টেলিকম, টেকনোলজি, জীবনধারা, ধর্ম এবং জাতি নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে লেখালেখি করে থাকি। আমার লেখাগুলো তথ্যবহুল, পাঠকের কাছে সহজবোধ্য এবং সমসাময়িক। Mymensingh, Bangladesh.

রিলেটেড পোষ্ট