চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে সরকার বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হলো সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের দাম ও শুল্ক বৃদ্ধি।
এই নতুন সিদ্ধান্তে সিগারেটের দাম এবং সম্পূরক শুল্ক দুই দিকেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য মূলত রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাক্ষরিত অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে, যা ৯ জানুয়ারি রাতে জারি করা হয়।
এবারের বাজেটে সিগারেটের দাম
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সিগারেটের চারটি স্তরে দাম এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সুনির্দিষ্টভাবে এসব পরিবর্তনের তথ্য প্রকাশ করেছে।
নিম্নস্তর- নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম প্রতি ১০ শলাকা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এর সাথে সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
মধ্যমস্তর- মধ্যমস্তরের সিগারেটের দাম প্রতি ১০ শলাকা ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্কের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে শুল্ক ছিল ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ, এখন তা ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
উচ্চস্তর- উচ্চস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে ১০ শলাকার দাম ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। এখানেও সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অতি উচ্চস্তর- অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮৫ টাকা করা হয়েছে। এ স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্কও ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
সিগারেট ছাড়াও অন্যান্য কিছু পণ্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে লাইম স্টোন এবং ডলোমাইট অন্যতম। এই দুই ধরনের পণ্যে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।
নতুন শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব
সরকারি এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় বাড়ানো। চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এর প্রভাব বহুমুখী হতে পারে।
একদিকে, সিগারেটের দাম বাড়ানোর ফলে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা হয়তো এই পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি ভালো দিক। অন্যদিকে, তামাক পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করলে রাজস্ব বাড়বে, যা দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যয় করা সম্ভব।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দাম বাড়ার ফলে সিগারেটের অবৈধ বাজার বিস্তার লাভ করতে পারে। অনেকেই নকল বা কর ফাঁকি দেওয়া সিগারেট কেনার চেষ্টা করতে পারেন। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি ও জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একদিকে, অনেকেই তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তামাকের ব্যবহার কমে গেলে এর ফলে সিগারেটজনিত রোগ যেমন ফুসফুস ক্যানসার, হার্টের সমস্যা, ইত্যাদির সংখ্যা কমতে পারে।
অন্যদিকে, কিছু মানুষ এই পরিবর্তনকে আরেকটি অর্থনৈতিক চাপ হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা ইতিমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমস্যায় রয়েছেন, তাদের জন্য এটি আরও একটি বাড়তি বোঝা।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য হলো রাজস্ব বৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলা করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে রাজস্ব আদায়ের হার বাড়বে বলে সরকারের প্রত্যাশা।
তবে এই সিদ্ধান্ত কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ালে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। বাংলাদেশ সরকার এই নীতিটি বাস্তবায়ন করতে চায়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
সরকারের এই পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক দিক সৃষ্টি করতে পারে, যদি এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। তবে এর সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে অবৈধ সিগারেট ব্যবসার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
অন্যদিকে, এই পদক্ষেপ সাধারণ জনগণের মধ্যে নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু সিগারেট একটি নিত্যব্যবহার পণ্য, তাই অনেকেই এটি কিনতে অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হন। সেক্ষেত্রে, নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও অবনতি হতে পারে।
সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এটি জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তা করবে। তবে এই পদক্ষেপের সঠিক কার্যকারিতা নির্ভর করবে এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং অবৈধ বাজার নিয়ন্ত্রণের ওপর। জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় হলো সঠিক তথ্য জানানো এবং তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সরকারের উচিত এই খাতে আরও পরিকল্পিতভাবে কাজ করা, যাতে এই সিদ্ধান্ত দেশ ও জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনে।
DISCLAIMER
এই আর্টিকেলে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা সমস্ত নির্ভুল তথ্য দিয়েছি। কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগের জন্য [email protected] মেইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।