রাজ্যকে টাকা পাঠানোর নিয়ম বদলাচ্ছে কেন্দ্র, এবার অর্থ যাবে সরাসরি জনগণের কাছে

Written by Bikrom Das

Published on:

কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিতে সরকারি প্রকল্পের অর্থ পাঠানোর পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। এতদিন বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের হাতে অর্থ পাঠানো হত, কিন্তু এখন থেকে সেই অর্থ সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। আবাসন, ১০০ দিনের কাজ, গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নসহ একাধিক প্রকল্পের অর্থ রাজ্য সরকারের মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছে যাবে।

কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, রাজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাঠালে প্রকল্পের স্বচ্ছতা কমে যায় এবং অনেক সময় তা সঠিকভাবে জনগণের কাছে পৌঁছায় না। এই কারণে সরকার নতুন একটি ব্যবস্থা আনতে চলেছে, যেখানে প্রকল্পের অর্থ সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা পড়বে। এই নতুন ব্যবস্থাটি “এক জাতি, এক রেশন” এবং “এক জাতি, এক ভোট” ধারণার মতোই কেন্দ্রের পরিকল্পনার অংশ। এতে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা কেন্দ্র সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

রাজ্যকে টাকা পাঠানোর নিয়ম বদলাচ্ছে কেন্দ্র

এই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ করবে। রাজ্য সরকার দাবি করছে, এই নতুন নিয়মে তাদের ভূমিকা কমে যাবে এবং তারা উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে।

নতুন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের জন্য কিছু সুবিধা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যারা প্রকল্পের সুবিধা পান, তাদের জন্য টাকা সরাসরি পাওয়া সুবিধাজনক হবে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যা, তথ্য বিভ্রান্তি এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্রের জটিলতা অনেকের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পরিবর্তন ভবিষ্যতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এটি নিশ্চিত যে, রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে মতবিরোধ আরও বাড়তে পারে। শেষ পর্যন্ত, প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা যদি সরাসরি টাকা পান এবং প্রকল্পের স্বচ্ছতা বজায় থাকে, তাহলে এই পরিবর্তন ইতিবাচক হতে পারে। তবে রাজ্যগুলির আপত্তি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার জটিলতা সমাধান করাই হবে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত অর্থ সময়মতো দিচ্ছে না। এর ফলে রাজ্য সরকারকে নিজের তহবিল ব্যবহার করে এসব প্রকল্প চালাতে হচ্ছে।

কেন্দ্রের বিলম্বে রাজ্যের সমস্যা

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ ছাড় করতে দেরি হচ্ছে, যার ফলে রাজ্যকে নিজস্ব বাজেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, “কেন্দ্র আমাদের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) দেওয়ার পরও অর্থ আটকে রাখা হচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেছেন যে এটি একটি রাজনৈতিক চাল, যা রাজ্য সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে চাপে ফেলতে পারে।

আগে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ক্রমে রাজ্যকে অর্থ পাঠাত এবং রাজ্য সরকার সেই অর্থ কীভাবে ব্যবহার করেছে, তার রিপোর্ট জমা দিতে হত। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে কেন্দ্রীয় অর্থ সরাসরি সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফলে রাজ্য সরকার আর এই তহবিল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্কের টানাপোড়েন

এই নতুন নিয়ম চালু হলে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের যুক্তি, এভাবে অর্থ পাঠালে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং প্রকল্পের টাকা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছাবে। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এটি রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব করার একটি পদক্ষেপ। পরিস্থিতি যাই হোক, কেন্দ্র ও রাজ্যের এই অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর ওপর পড়বে। এখন দেখার বিষয়, এই সমস্যার সমাধান কিভাবে হয়।

আমি বহু-বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছি। আমি বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, টেলিকম, টেকনোলজি, জীবনধারা, ধর্ম এবং জাতি নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে লেখালেখি করে থাকি। আমার লেখাগুলো তথ্যবহুল, পাঠকের কাছে সহজবোধ্য এবং সমসাময়িক। Mymensingh, Bangladesh.

রিলেটেড পোষ্ট

Thanks for watching! Content unlocked for this session.