মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি কি কারণে হচ্ছে!

Written by Bikrom Das

Published on:

এই আর্টিকেলে আমরা আলচনা করব মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি (Height increase of Mount Everest) বিষয় নিয়ে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট আবারো আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। সম্প্রতি এক নতুন জরিপে দেখা গেছে, এভারেস্টের উচ্চতা বেড়েছে। অবাক করার বিষয় হলো, এই উচ্চতা বৃদ্ধি হঠাৎ করেই ঘটে গেছে। কোথাও ১৫ মিটার, কোথাও আবার ৫০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বেড়েছে। তবে এই ঘটনার পেছনে বেশ চমকপ্রদ এবং বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।

মাউন্ট এভারেস্ট নেপাল ও চীনের সীমান্তে অবস্থিত। এর উত্তরভাগ চীনের অংশে এবং দক্ষিণভাগ নেপালের অংশে পড়েছে। প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি বছর আগে ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়। এখনো সেই প্লেটগুলো সক্রিয় রয়েছে। এই সক্রিয়তা হিমালয়ের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।

মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি

এভারেস্টের উচ্চতা বাড়ার প্রধান কারণ হলো ভূমিকর্ষণ বা “ইরোশন” এবং এর ফলাফল হিসেবে ভূমির নিচের আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড। পর্বতের পাদদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়া অরুণ নদী ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাথর ও মাটি সরিয়ে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার ফলে মাটি সরলেও ভূপৃষ্ঠের নিচের ম্যান্টেল স্তর চাপের কারণে ফুলে উঠছে। এতে এভারেস্টসহ আশপাশের শৃঙ্গগুলোর উচ্চতা কিছুটা বেড়ে গেছে।

বিজ্ঞানী অ্যাডাম স্মিথ এক মজার উপমা দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি অনেকটা পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালপত্র ফেলে দেওয়ার মতো। যখন কোনো জাহাজ থেকে মাল ফেলা হয়, তখন জাহাজটি পানিতে একটু ওপরে উঠে যায়। ঠিক তেমনভাবেই মাটি ও পাথর সরলে পর্বতের উচ্চতা কিছুটা বেড়ে যায়।

হিমালয়ের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা অরুণ নদী এই প্রক্রিয়ার একটি বড় কারণ। নদীটি তার গতিপথে পাথর ও মাটি ক্ষয় করে এবং সরিয়ে নেয়। ফলে ভূত্বকের ওপরের স্তর হালকা হয়। মাটির এই কমতি পূরণ করতে ভূত্বকের নিচের ম্যান্টেল স্তর ওপরের দিকে উঠে আসে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অরুণ নদীর ভূমিক্ষয়ের ফলে এভারেস্ট ছাড়াও লোৎসে এবং মাকালুর মতো শৃঙ্গগুলোর উচ্চতাও বেড়েছে। এভাবেই হিমালয়ের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড

ভূবিজ্ঞানে এই প্রক্রিয়াটি পরিচিত আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড নামে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মাটি ও পাথর সরার কারণে ভূত্বকের নিচের স্তর ওপরের দিকে উঠে আসে। ভূত্বক বা ক্রাস্ট এবং তার নিচের ম্যান্টেল স্তর একধরনের ভারসাম্য বজায় রাখে। মাটি ও পাথরের ওজন কমলে এই ভারসাম্য বদলে যায়। তখন ম্যান্টেল স্তর চাপ প্রয়োগ করে ভূপৃষ্ঠকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়।

কারণপ্রভাব
ভূমিক্ষয় (ইরোশন)ভূত্বকের নিচের চাপ কমে যায়
ম্যান্টেলের ওপর চাপ বৃদ্ধিভূত্বকের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়
শৃঙ্গের অবস্থানএভারেস্ট ও আশপাশের শৃঙ্গের উচ্চতা বেড়ে যায়

নতুন জরিপ ও প্রযুক্তি ব্যবহার

এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রমাণ পেতে বিজ্ঞানীরা জিপিএস (GPS) যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। এটি শুধু অনুমান নয়, গবেষণালব্ধ প্রমাণ। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এভারেস্টের উচ্চতা যে কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নয়, বরং এর আশপাশের শৃঙ্গগুলোর উচ্চতাও একই প্রক্রিয়ায় বাড়ছে।

এই জরিপের ফলাফল আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা নেচার জিওসায়েন্স (Nature Geoscience)-এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উচ্চতা বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।

মাউন্ট এভারেস্টের পরপরই বিশ্বের চতুর্থ এবং পঞ্চম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসে এবং মাকালু। এই দুটি শৃঙ্গের উচ্চতাও একই প্রক্রিয়ায় বেড়ে চলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূত্বকের নিচের পরিবর্তনের কারণে শুধু এভারেস্ট নয়, হিমালয়ের বেশ কিছু পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা বাড়ছে।

উচ্চতা বৃদ্ধির গুরুত্ব

এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির খবর শুধু ভৌগোলিক দিক থেকে নয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে শৃঙ্গের তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ এবং বরফের গঠনেও প্রভাব পড়তে পারে। এটি ভবিষ্যতে পর্বতারোহণকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

পরিবেশবিদরা মনে করছেন, উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এখানকার প্রকৃতির পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপরও পরিবর্তন আসবে।

মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সহজ। ভূমিক্ষয়, ম্যান্টেল স্তরের চাপ এবং আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড একত্রে এই পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা আমাদের দেখাচ্ছে যে, পৃথিবীর প্রকৃতি আজও কতটা গতিশীল। এভারেস্ট শুধু একটি পর্বত নয়, এটি প্রাকৃতিক পরিবর্তনের এক অনন্য উদাহরণ।

তথ্যসূত্র

  1. নেচার জিওসায়েন্স পত্রিকা
  2. বিজ্ঞানী অ্যাডাম স্মিথের গবেষণা
  3. মাউন্ট এভারেস্ট ও হিমালয়ের ভৌগোলিক ইতিহাস

এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে নতুন তথ্য শুধু একটি বৈজ্ঞানিক কৌতূহল নয়, বরং প্রকৃতির পরিবর্তনের এক বাস্তব চিত্র।

আমি বহু-বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছি। আমি বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, টেলিকম, টেকনোলজি, জীবনধারা, ধর্ম এবং জাতি নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে লেখালেখি করে থাকি। আমার লেখাগুলো তথ্যবহুল, পাঠকের কাছে সহজবোধ্য এবং সমসাময়িক। Mymensingh, Bangladesh.

রিলেটেড পোষ্ট

Thanks for watching! Content unlocked for this session.