বাস্টার কিটন কে ? টার্নার ক্লাসিক সিনেমা।

Written by Bikrom Das

Published on:

বাস্টার কিটন নামটি শুনলেই ১৯২০ এর দশকের সাইলেন্ট ফিল্ম যুগের কথা মনে পড়ে। তাঁর চমকপ্রদ হাস্যরস, অনন্য স্টান্ট এবং ধৈর্যশীল, বিমূর্ত মুখভঙ্গি তাঁকে দ্য গ্রেট স্টোন ফেস খ্যাতি এনে দিয়েছে। কিটন ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা। আজও তিনি সাইলেন্ট ফিল্ম যুগের অন্যতম বড় তারকা হিসেবে পরিচিত।

কিটনের পুরো নাম ছিল জোসেফ ফ্রাঙ্ক বাস্টার কিটন (Buster Keaton)। তাঁর জন্ম ১৮৯৫ সালের ৪ অক্টোবর, আমেরিকার কানসাস রাজ্যের পিকুয়া নামক শহরে। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিনোদন জগতে বড় হয়েছেন। তাঁর বাবা-মা ছিলেন জনপ্রিয় বাস্টার নামে পরিচিত ভডেভিল অভিনয় শিল্পী। মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি স্টেজে তারকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।

ছোটবেলা থেকেই বাস্টার মঞ্চে পারফর্ম করতেন এবং ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়াতে থাকেন। ১৯১৭ সালে, তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা রোজকো ফ্যাটি আরবাকলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। এখানে কিটনের অভিনয় দক্ষতা ও কৌতুকপ্রিয়তা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

বাস্টার কিটনের চলচ্চিত্র

বাস্টার কিটন অসংখ্য জনপ্রিয় মুভি তৈরি করেছেন, যা তাঁকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:

সিনেমার নামমুক্তির বছরবিশেষ বৈশিষ্ট্য
Sherlock Jr.১৯২৪কল্পনামূলক, ক্রাইম থ্রিলার
The General১৯২৬রোমান্টিক ও যুদ্ধকালীন কৌতুক
Steamboat Bill, Jr.১৯২৮স্টান্ট ও মজার কাহিনী

Sherlock Jr. সিনেমায় তিনি এক সিনেমা প্রজেকশনিস্ট হিসেবে অভিনয় করেন। এতে তিনি কল্পনার জগতে খুনের তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক কৌতুকপূর্ণ ঘটনা ঘটান। The General মুভিটি এক রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার ও তার প্রিয় ট্রেনকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে, যা তাকে রেলওয়ের তাড়া খাওয়া শত্রুদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর কৌতুক সৃষ্টি করে।

স্টান্টের জন্য বিখ্যাত

কিটন তার স্টান্টের জন্য বিখ্যাত ছিলেন, যা এক সময়ে বিপজ্জনক ছিল। তাঁর বিখ্যাত স্টান্টের মধ্যে একটি হলো Steamboat Bill, Jr.-তে একটি বিশাল দেয়াল ভেঙে পড়ার দৃশ্য। কিটন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং দেওয়ালটি তাঁর চারপাশে ভেঙে পড়ে। বাস্তবে এতে তাঁর মৃত্যু হতে পারত। এই দৃশ্য কিটনের সাহসিকতা এবং অভিনয়ের প্রতি তাঁর আত্মনিবেদন তুলে ধরে।

১৯২০-এর দশকে কিটন বেশ কিছু চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, যা তাঁকে একজন সুপরিচিত পরিচালক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। তবে ধীরে ধীরে তাঁর ক্যারিয়ারে বাধা আসতে শুরু করে।

সাইলেন্ট ফিল্ম যুগের পতন ও কিটনের অবনতি

যখন সাইলেন্ট ফিল্ম যুগের অবসান ঘটে এবং সাউন্ড মুভির আবির্ভাব ঘটে, তখন কিটনের ক্যারিয়ার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তিনি কিছু সাউন্ড মুভিতে অভিনয় করেছিলেন, কিন্তু সাইলেন্ট মুভিতে তার সাফল্য সাউন্ড মুভিতে প্রতিফলিত হয়নি। এরপর বেশ কিছু আর্থিক সংকটে পড়েন এবং ক্যারিয়ারে মন্দাভাব দেখা দেয়।

শেষ জীবনে কিটনের অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা কখনোই কমেনি। ১৯৫০-এর দশকে তাঁকে পুনরায় সম্মানিত করা হয়। বিভিন্ন টেলিভিশন শো ও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি তার জনপ্রিয়তা ফিরে পান।

বাস্টার কিটন হাসেনি কেন ?

বাস্টার কিটন হলেন একজন বিখ্যাত আমেরিকান মূকাভিনয় অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি “দ্য গ্রেট স্টোন ফেস” নামে পরিচিত। কারণ, তার মুখে কোন হাসি দেখা যেত না। এ বিষয়টি অনেকের কাছে অদ্ভুত মনে হয়। কিন্তু বাস্টার কিটন হাসেননি কেন? এর পেছনে রয়েছে কিছু গভীর কারণ ও গল্প।

বাস্টার কিটনের জন্ম হয় ১৮৯৫ সালের ৪ অক্টোবর, আমেরিকার কানসাসে। ছোটবেলা থেকেই তিনি এক প্রকার শৈল্পিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। তার পরিবার মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। ফলে, অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়। বাস্টারের পরিবারের কাছে অভিনয় কেবল কাজ ছিল না, বরং তাদের জীবনযাপনেরই অংশ ছিল।

বাস্টার কিটন তার অভিনয়ে সবসময় অপ্রতিহত আবেগ দেখাতেন না। বরং তিনি তার মূকাভিনয়ে এতটাই দক্ষ ছিলেন যে, চোখ ও মুখের সামান্য অভিব্যক্তি দিয়েই দর্শকদের হাসাতেন। কিন্তু তার নিজের মুখ সবসময় গম্ভীর থাকত। অনেকের মতে, এতে দর্শকরা আরও বেশি হাসতেন, কারণ তার চরিত্রে থাকা গাম্ভীর্য এক প্রকার কৌতুক তৈরি করত।

সময়কালচরিত্রের বৈশিষ্ট্যপ্রভাব
১৯২০-এর দশকমূকাভিনয় এবং গম্ভীর মুখকৌতুক তৈরি করত
১৯৩০-এর দশকহাসির বদলে গম্ভীর অভিব্যক্তিগাম্ভীর্যই ছিল তার কৌতুকের মূল উপাদান

বাস্টার কিটন হাসেননি কারণ এতে তার কৌতুকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য তৈরি হতো। তার এই হাসিহীন মুখশ্রাব্যতা এক ধরনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গড়ে ওঠে, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। এছাড়া, তার অভিনয়শৈলীতে একটি কঠোর নিয়মাবলী ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, হাসি দিলে তার চরিত্রের গাম্ভীর্য হারিয়ে যাবে।

বাস্টার কিটনের মতে, হাসির প্রকাশ না থাকলেও চরিত্রের শক্তিশালী দিক বজায় রাখা সম্ভব। তার অভিনয়ের দর্শনে হাসির মাধ্যমে কৌতুক সৃষ্টি না করে বরং তার মূকাভিনয় থেকে কৌতুকের সৃষ্টি হোক। তিনি মনে করতেন, একজন প্রকৃত অভিনেতার জন্য সবসময় মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে হয় না। বরং তাকে তার অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শককে মুগ্ধ করতে হয়।

বাস্টার কিটনের বাবা-মাও তাকে গম্ভীরভাবে অভিনয়ের শিক্ষা দিয়েছিলেন। পারিবারিক জীবনেও তার পরিবেশ ছিল বেশ কঠোর। তার বাবা-মা চেয়েছিলেন তিনি যেন একজন সেরা মূকাভিনেতা হন, এবং সেই পথেই তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে, ছোটবেলা থেকেই তিনি বুঝেছিলেন যে অভিনয়ে গাম্ভীর্য বজায় রাখা তার কাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বাস্টার কিটনের অভিনয়ে হাসিহীন অভিব্যক্তি তার ভক্তদের কাছে বেশ মজাদার ছিল। তাকে দেখে অনেকেই আনন্দ পেতেন এবং কৌতুকের সৃজনশীল দিকটি উপভোগ করতেন। বাস্টার কিটন ছিলেন একাধারে একজন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। তাঁর অনন্য অভিনয় ও স্টান্টের দক্ষতা চলচ্চিত্র জগতে আজও সমাদৃত। তাঁর চলচ্চিত্রগুলি এখনও মানুষকে আনন্দ দেয়। প্রিয় পাঠক, আপনি বিনোদনের জন্য অন্যান্য তথ্য পড়তে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটের বিনোদন ক্যাটাগরি ভিজিট করুন।

আমি বহু-বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছি। আমি বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, টেলিকম, টেকনোলজি, জীবনধারা, ধর্ম এবং জাতি নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে লেখালেখি করে থাকি। আমার লেখাগুলো তথ্যবহুল, পাঠকের কাছে সহজবোধ্য এবং সমসাময়িক। Mymensingh, Bangladesh.

রিলেটেড পোষ্ট