রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম

Written by WhatsUpBD Desk

Updated on:

রমজান মাস, রহমত আর বরকতের মাস। এই মাসে আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা রাখি। কিন্তু রোজার সময় কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মনে দ্বিধা তৈরি হয়, যেমন – রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙে যায়? গোসল কিভাবে করতে হবে? আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যাতে আপনারা রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে সঠিক আমল করতে পারেন। স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তাই রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। চলুন, জেনে নেই রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম এবং এই সংক্রান্ত কিছু জরুরি তথ্য।

রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম

রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা কোনো শারীরিক দুর্বলতা অথবা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। তবে হ্যাঁ, স্বপ্নদোষ হলে অবশ্যই আপনাকে গোসল করতে হবে।

স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ?

ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভাঙে না। কারণ স্বপ্নদোষ অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকে। এটি রোজাদারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে, স্বপ্নদোষ হওয়ার পর দ্রুত গোসল করে নেয়া জরুরি, যাতে আপনি পবিত্র থাকতে পারেন এবং সময়মতো নামাজ আদায় করতে পারেন।

ফরজ গোসলের নিয়ম

ফরজ গোসল করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি, বিশেষ করে যখন শরীর নাপাক থাকে। নিচে ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম দেওয়া হলো:

  • গোসলের পূর্বে নিয়ত করা

গোসলের শুরুতে মনে মনে নিয়ত করতে হবে যে, আমি শরীর পাক করার জন্য গোসল করছি। নিয়ত করা ফরজ না হলেও, এটি গোসলকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।

  • প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া

প্রথমে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

  • শরীরের নাপাক স্থানগুলো পরিষ্কার করা

শরীরের যেখানে নাপাকি লেগে আছে, যেমন – লজ্জাস্থান, তা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

  • ওযু করা

নামাজের জন্য যেভাবে ওযু করেন, ঠিক সেভাবে পূর্ণাঙ্গ ওযু করুন। তবে, এই ওযুতে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া জরুরি।

  • সমস্ত শরীরে পানি ঢালা

প্রথমে মাথার উপরে তিনবার পানি ঢালুন, তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, শরীরের কোনো অংশ যেন শুকনো না থাকে।

  • ডান দিক থেকে শুরু করা

গোসলের সময় প্রথমে ডান পাশের অঙ্গগুলোতে পানি ঢালুন, তারপর বাম পাশের অঙ্গগুলোতে।

  • ঘাড় ও পায়ের গোড়ালি ধোয়া

ঘাড় এবং পায়ের গোড়ালি ভালোভাবে ধুয়ে নিন, যাতে কোনো অংশ শুকনো না থাকে।

রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে করণীয়

রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে আপনার প্রধান কাজ হলো দ্রুত ফরজ গোসল করে নেয়া। এছাড়াও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন, যেমন: স্বপ্নদোষ হয়ে গেলে অস্থির না হয়ে শান্ত থাকুন। দ্রুত গোসল করে শরীরকে পাক করুন। এবং গোসলের পর স্বাভাবিকভাবে আপনার ইবাদত চালিয়ে যান।

ইসলামের আলোকে স্বপ্নদোষ

ইসলাম স্বপ্নদোষকে একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখে। এটি কোনো গুনাহের কাজ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো খারাপ চিন্তা বা কাজে লিপ্ত হন।

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আল্লাহ কোনো মানুষের উপর তার সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপান না।” (সূরা আল-বাকারা, ২৮৬)

হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তিন শ্রেণির মানুষের উপর থেকে শরয়ী বিধান প্রত্যাহার করা হয়েছে – ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, অপ্রাপ্তবয়স্ক যতক্ষণ না সে সাবালক হয় এবং পাগল যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়।” (আবু দাউদ, ৪৪০৩)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ঘুমন্ত অবস্থায় কোনো কিছু হলে তার জন্য ব্যক্তি দায়ী নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত,

মুফতি মনসুরুল হক বলেন, “স্বপ্নদোষ একটি প্রাকৃতিক বিষয়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে, গোসল করে নেয়া সুন্নত।”

ড. আবু বকর রফিক বলেন, “ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী, অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুলের জন্য রোজা ভাঙে না। স্বপ্নদোষ তাদের মধ্যে একটি।”

কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

  • প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙে যায়?

উত্তর: না, রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙে না। কারণ এটি অনিচ্ছাকৃত একটি ঘটনা।

  • প্রশ্ন: স্বপ্নদোষের পর গোসল করতে দেরি হলে কি গুনাহ হবে?

উত্তর: হ্যাঁ, দেরি করা উচিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব গোসল করে নেয়া ভালো।

  • প্রশ্ন: রোজার মাসে স্বপ্নদোষ থেকে বাঁচার উপায় কি?

উত্তর: রোজার মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করুন, ইসলামিক বই পড়ুন, এবং খারাপ চিন্তা থেকে দূরে থাকুন।

  • প্রশ্ন: স্বপ্নদোষের কারণে রোজা মাকরুহ হয় কি?

উত্তর: না, স্বপ্নদোষের কারণে রোজা মাকরুহ হয় না।

  • প্রশ্ন: মহিলাদের মাসিক চলাকালীন স্বপ্নদোষ হলে কি করতে হবে?

উত্তর: মাসিক চলাকালীন স্বপ্নদোষ হলে, মাসিক শেষ হওয়ার পর গোসল ফরজ হবে।

  • প্রশ্ন: তারাবীহ নামাজের আগে স্বপ্নদোষ হলে কি তারাবীহ পড়া যাবে?

উত্তর: না, তারাবীহ নামাজের আগে স্বপ্নদোষ হলে প্রথমে গোসল করে শরীর পাক করতে হবে, তারপর নামাজ পড়তে পারবেন।

  • প্রশ্ন: রোজা রাখা অবস্থায় ঘুমের মধ্যে খারাপ কিছু দেখলে কি রোজা ভেঙে যায়?

উত্তর: ঘুমের মধ্যে খারাপ কিছু দেখলে রোজা ভাঙে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার বীর্যপাত হয়।

  • প্রশ্ন: স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে সেহরি খাওয়া যাবে কি?

উত্তর: না, স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে সেহরি খাওয়া যাবে না। প্রথমে গোসল করে শরীর পাক করুন, তারপর সেহরি খান।

  • প্রশ্ন : ফরজ গোসলের সময় কি কাপড় পরা অবস্থায় গোসল করা যায়?

উত্তর: ফরজ গোসলের সময় এমনভাবে গোসল করা উচিত, যাতে আপনার শরীর ভালোভাবে ভেজে। তবে, প্রয়োজনে কাপড় পরা অবস্থায় গোসল করতে পারেন, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরের কোনো অংশ শুকনো না থাকে।

চূড়ান্ত মন্তব্য 

রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হওয়া কোনো ভয়ের বিষয় নয়। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। স্বপ্নদোষ হলে ভেঙে না পড়ে দ্রুত গোসল করে নিন এবং আপনার ইবাদত চালিয়ে যান। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার সুযোগ দিন। 

WhatsUpBD Desk আমরা অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত লেখক টিম, যারা বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, জীবনধারা, টেকনোলজি, টেলিকম, ধর্ম ও জাতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করে থাকি। তথ্যনির্ভর এবং পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে তারা পাঠকদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেই।

রিলেটেড পোষ্ট

Thanks for watching! Content unlocked for this session.