সম্প্রতি হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (HMPV) নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস নতুন নয় এবং এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আসলে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস নিয়ে সঠিক তথ্য জানা জরুরি, যা অনেক ক্ষেত্রে ভুল ধারণা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।
HMPV ভাইরাস কি
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (HMPV) একটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। এর সঙ্গে মেটানিউমো ভাইরাসের অন্যান্য ধরন যেমন এভিয়ান মেটানিউমো ভাইরাসের মিল আছে, যা মূলত পাখিদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি মানুষের মধ্যে অনেক আগে থেকেই উপস্থিত ছিল। শীতের সময় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় এবং এটি শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
যেকোনো শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণকারী ভাইরাসের মতো, হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসও ছোঁয়াচে। এটি বাতাসে থাকা ক্ষুদ্র জলকণার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বা স্পর্শের মাধ্যমে অন্যের শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করতে পারে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।
HMPV ভাইরাসের লক্ষণ
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসের উপসর্গ সাধারণ ফ্লুর মতোই।
- কাশি
- সর্দি
- নাক দিয়ে জল পড়া
- জ্বর
- গলা ব্যথা
এই উপসর্গগুলো সাধারণত ২-৫ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বা যাঁদের আগে থেকে অ্যাজমা, সিওপিডি বা অন্য দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এটি কিছুটা জটিল হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
HMPV treatment চিকিৎসা কী
চিকিৎসকরা বলছেন, হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি নিজে থেকেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এ ক্ষেত্রে কার্যকর নয়, কারণ এটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। প্রয়োজন হলে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন, জ্বর কমানোর ওষুধ বা কাশির জন্য সিরাপ। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে, যেমন শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে, সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট বা হাসপাতালের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসক দীপঙ্কর মান্না জানিয়েছেন, এই ভাইরাস নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, “এই সংক্রমণ করোনা অতিমারির দ্বিতীয় পর্যায়ের মতো কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে না। বরং এটি সাধারণ ফ্লুর মতোই সামান্য অসুস্থতার কারণ হতে পারে।”
তাঁর মতে, মানুষকে সচেতন করতে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভীতিকর শিরোনাম ব্যবহার না করে সঠিক তথ্য প্রচার করা উচিত। এছাড়া, মানুষকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হলো এই সংক্রমণ থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়।
- নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
- ভিড় এড়িয়ে চলা
- হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা
- অসুস্থ ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা
শিশু এবং বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত, কারণ তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব
চিকিৎসক মান্নার মতে, সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকায় সঠিক তথ্য পরিবেশন করাই প্রধান হওয়া উচিত। “সামান্য অসুস্থতাকে বড় করে দেখানো মানুষের মনে অযথা ভয় সৃষ্টি করে,” তিনি বলেন। তাঁর পরামর্শ, “বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকা পড়ুন এবং বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে তথ্য জেনে নিন।“
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটি একটি পরিচিত ভাইরাস, যা মূলত শীতকালে সংক্রমণ ঘটায় এবং সাধারণ ফ্লুর মতো মৃদু উপসর্গ সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সচেতন থাকা এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট। ভুল তথ্য বা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকা সবার দায়িত্ব। সঠিক তথ্য জানা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই একমাত্র পথ। অতএব, উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।