রকেটের জ্বালানি হিসেবে কী ব্যবহার করা হয় এবং বিমানের জ্বালানি কী ব্যবহার করা হয়—এ বিষয়ে যদি আপনার আগ্রহ থাকে, তবে এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আজকাল প্রায় প্রতিটি দেশই তাদের ভূখণ্ড থেকে আকাশ পথে রকেট পাঠানোর স্বপ্ন দেখে। তবে কিছু দেশ অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম না হওয়ায় এই কাজটি করতে পারে না। বর্তমানে রকেট ও বিমানের ইঞ্জিন চালানোর জন্য ব্যবহৃত তেলের বিকল্প হিসেবে কী ব্যবহার করা হচ্ছে, এ নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। তবে আমাদের বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল এবং আধুনিক দেশ হিসেবে ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছে। এ ছাড়া, এই নিবন্ধে আপনি জানতে পারবেন রকেট কী কাজে ব্যবহার করা হয় এবং রকেট সেকেন্ডে কত কিলোমিটার গতিতে চলে।
সূচিপত্র
রকেটের জ্বালানি হিসেবে কি ব্যবহৃত হয়
রাসায়নিক রকেটের জ্বালানি হিসেবে প্রধানত ব্যবহৃত হয় তরল হাইড্রোজেন। এই হাইড্রোজেন একসঙ্গে পোড়ানো হয় একটি অক্সিডাইজারের সঙ্গে, যেমন তরল অক্সিজেন বা নাইট্রিক অ্যাসিড। এই পোড়ানোর প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে অত্যন্ত গরম গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা রকেটকে উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে তার গতির শক্তি তৈরি করে।
এখনকার সময়ে আমাদের দেশ থেকেও রকেট, স্যাটেলাইট ইত্যাদি আকাশপথে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। অনেকেই জানেন না, রকেটের জ্বালানি হিসেবে কী ব্যবহার করা হয়। মূলত, এই পোস্টে আমরা সেসব বিষয়ে আলোচনা করব।
কঠিন এবং তরল পদার্থ
রকেট চালানোর জন্য মূলত দুটি ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা হয়: কঠিন পদার্থ এবং তরল পদার্থ। রকেটের ধরন এবং উৎক্ষেপণের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়, কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা হবে। কিছু রকেটে কঠিন পদার্থ ব্যবহৃত হয়, আবার কিছু রকেটে তরল পদার্থ ব্যবহৃত হয়।
কঠিন পদার্থের ব্যবহৃত জ্বালানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সঞ্চয় ও পরিবহন করা সহজ। এতে ইনজিনের ডিজাইনও অনেক সহজ হয়ে থাকে। কঠিন পদার্থে সাধারণত জ্বালানি এবং অক্সিডাইজার একসঙ্গে মিশ্রিত থাকে। এর ফলে রকেট উৎক্ষেপণের সময় খুব দ্রুত শক্তি উৎপন্ন হয়। তবে কঠিন পদার্থের একটি সমস্যা হলো, একবার উৎক্ষেপণের পর এর গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
তবে তরল পদার্থের ব্যবহার কিছুটা জটিল, কিন্তু এটি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তরল পদার্থের মধ্যে থাকে তরল অক্সিজেন, তরল হাইড্রোজেন, এবং অন্যান্য পদার্থ। তরল পদার্থের বড় সুবিধা হলো, এটি রকেটের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি উৎক্ষেপণের সময়ই ব্যবহার করা হয় এবং এই জ্বালানির সঞ্চয়ও সহজ। তবে এটি পরিবহন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে, কারণ তরল পদার্থে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রকেট কত দ্রুত চলে
রকেটের গতি বলতে, সাধারণত একে সেকেন্ডে কত কিলোমিটার চলতে পারে, তা বোঝানো হয়। একটি রকেটের গতি তার ইঞ্জিনের শক্তি এবং জ্বালানি পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত রকেট সেকেন্ডে প্রায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার গতি পেতে পারে, তবে এটি রকেটের ধরন ও ব্যবহার অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। মহাকাশের দিকে রকেট পাঠানোর সময়, এটি পৃথিবীর আকাশের বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে একের পর এক গতি অর্জন করে।
বাংলাদেশে রকেট প্রযুক্তির উন্নয়ন
বর্তমানে বাংলাদেশও রকেট প্রযুক্তি ও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এই সফল উৎক্ষেপণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় অংশগ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করেছেন। এছাড়া, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি অনুসন্ধানে, বাংলাদেশের রকেট সিস্টেমও উন্নত হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আকাশপথে রকেট পাঠানো আরও সহজ এবং নিরাপদ হবে।
রকেট বা মহাকাশযানটি উড্ডয়ন করার জন্য যে শক্তি প্রয়োজন, সেটি মূলত একটি নির্দিষ্ট ধরনের জ্বালানি দ্বারা তৈরি হয়। ইতিহাসে প্রথম রকেটটি তৈরি হয়েছিল কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে, এবং তা ছিল চীনা সংস্কৃতির অংশ। প্রাচীন চীনাতে বারুদের সাহায্যে প্রথম রকেট তৈরির সূচনা হয়েছিল, এবং সেই সময় থেকেই রকেট প্রযুক্তি ধীরে ধীরে উন্নত হতে থাকে। আজও এই প্রযুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, আজকের আধুনিক রকেটগুলোতে কী ধরনের জ্বালানি ব্যবহার হয় এবং সেগুলোর মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রকেটের জ্বালানি এবং এর পার্থক্য
রকেটের জ্বালানি দুটি মূল ধরনের হতে পারে: কঠিন জ্বালানি এবং তরল জ্বালানি। প্রথমে, রকেটের জন্য যে কঠিন জ্বালানির ব্যবহার শুরু হয়েছিল, তা ছিল মূলত বারুদ। বারুদের মধ্যে যে রাসায়নিক উপাদানগুলো রয়েছে, সেগুলো জ্বালানির হিসাবে কাজ করেছিল, যা বিস্ফোরণের মাধ্যমে রকেটকে ঠেলে সামনে নিয়ে যেত। তবে, রকেটের জ্বালানি ব্যবহারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছিল, কারণ বারুদের বিস্ফোরণ রকেটের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।রকেটের ইঞ্জিন যদি কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটায়, তাহলে তা অত্যন্ত বিপদজনক হতে পারে, কারণ রকেটের অগ্নি এবং শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন। এজন্য রকেটের জ্বালানিতে কিছু বিশেষ পরিবর্তন করা হয় যাতে এটি তাড়াতাড়ি পুড়ে না যায় এবং বিস্ফোরিত না হয়। এই পরিবর্তনের ফলে রকেটের জ্বালানি ধীরে ধীরে পুড়ে এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য হয়, যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
রকেটের ইঞ্জিনের সমস্যা
এছাড়া, রকেটের ইঞ্জিনের সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি বড় সমস্যা রয়েছে। রকেট একবার চালু হলে, তা থামানো সম্ভব নয়। এর মানে হলো, একবার রকেট চলতে শুরু করলে, তাকে থামানো কিংবা দিক পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। তাই, এসব রকেট সাধারণত মিসাইল ছোড়ার কাজে ব্যবহার করা হয় বা মহাকাশযানগুলির সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে রকেটের নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না, কিন্তু তার তীব্র গতির কারণে এটি দ্রুত এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
তরল জ্বালানি ব্যবহারের সূচনা
১৯২৬ সালে রবার্ট গডার্ড, যিনি আধুনিক রকেট প্রযুক্তির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম তরল জ্বালানির সাহায্যে রকেট তৈরি করেছিলেন। এই ধরনের রকেটের নকশা খুব কঠিন ছিল না, তবে তার কার্যকারিতা অনেক উন্নত ছিল। রবার্ট গডার্ড প্রথম রকেট তৈরি করতে পেট্রোল এবং তরল অক্সিজেন ব্যবহার করেছিলেন। এই তরল জ্বালানি যখন Combustion Chamber-এ পাম্প করা হয়, তখন সেখানে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই বিক্রিয়ার ফলে এক ধরনের গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে, যা রকেটকে সামনে ঠেলে নিয়ে যায়।
তরল এবং কঠিন জ্বালানির পার্থক্য
তরল জ্বালানি এবং কঠিন জ্বালানির মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেখানে কঠিন জ্বালানি রকেটকে একটি নির্দিষ্ট শক্তির মাধ্যমে ঠেলে দেয়, তরল জ্বালানি রকেটের গতিকে আরও নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত করে। কঠিন জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রকেটের গতি এবং শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে, কিন্তু তরল জ্বালানি ব্যবহারে তা আরও সহজ এবং সুনির্দিষ্ট হতে পারে।
আজকের রকেটগুলোতে সাধারণত তরল জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, কারণ এর মাধ্যমে রকেটের গতিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
রকেটের ব্যবহার
রকেটের মূল ব্যবহার হলো মহাকাশে পাড়ি দেওয়া, যেমন উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, মহাকাশযান পাঠানো ইত্যাদি। তবে রকেটের আরও কিছু ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে, মিলিটারি ক্ষেত্রে মিসাইল ছোড়ার জন্য রকেট ব্যবহার করা হয়। রকেটের সাহায্যে পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে বিভিন্ন জিনিস পাঠানো সম্ভব, যা আধুনিক বিজ্ঞানের বড় অগ্রগতি। এছাড়া, অনেক সময় রকেটগুলো মহাকাশ স্টেশন বা মহাকাশযানগুলির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে, যাতে তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
শেষ কথা
রকেট প্রযুক্তি এখনো অনেক কিছু নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে চলেছে। যদিও রকেটের ইতিহাস প্রাচীন চীন থেকে শুরু হলেও, আধুনিক রকেটগুলো অনেক বেশি উন্নত এবং এর জ্বালানি ব্যবস্থাও অনেক বেশি সুরক্ষিত। রকেটের জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, তা আজকের দিনের মহাকাশ গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা শুধু পৃথিবীর বাইরে পাড়ি জমাই না, বরং মহাকাশের রহস্য উদঘাটনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি।আশা করি, আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনি রকেটের জ্বালানি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছেন। এরকম আরো তথ্যপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন এবং আমাদের ফেসবুক পেজে চোখ রাখতে পারেন।
রকেটের জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রযুক্তি ও পদ্ধতি রয়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে তরল হাইড্রোজেন ও কঠিন পদার্থ। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অবস্থানেও রকেট প্রযুক্তির দিকে নজর দেওয়ায় দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। রকেটের জ্বালানি ব্যবহারের এই প্রযুক্তি কেবল পৃথিবীর উপকারেই নয়, বরং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে।এভাবে, রকেটের জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নানা প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা আমাদের মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য ব্লগ সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের লেখাগুলো পড়ুন।
DISCLAIMER
এই আর্টিকেলে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা সমস্ত নির্ভুল তথ্য দিয়েছি। কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগের জন্য [email protected] মেইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।