মঙ্গল গ্রহ, এক সময়ে ছিল উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশে পূর্ণ, যা প্রাণের অস্তিত্বের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, প্রাচীন কালে মঙ্গল গ্রহে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব ছিল। সম্প্রতি স্পেনের বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আন্দ্রেয়া বুতুরিনির নেতৃত্বে এক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে, যেখানে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে জীবাণু থাকতে পারে বলে নতুন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাটি সম্প্রতি নিউসায়েন্টিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গল গ্রহের অ্যাসিডালিয়া প্লানিটিয়া নামক এক প্রাচীন সমভূমির গভীরে মিথানোজেন নামক এক ধরনের অণুজীব থাকতে পারে।
সূচিপত্র
মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে জীবাণু থাকতে পারে
গবেষকরা মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে জীবনের কিছু নমুনা পাওয়া যেতে পারে এমন ধারণা করেছেন। তারা গ্রহটির বিভিন্ন মহাকাশযান ও রোভার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এর ফলে, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের ৪.৩ থেকে ৮.৮ কিলোমিটার গভীরে একটি বিশেষ এলাকায় জীবাণুর টিকে থাকার পরিবেশ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই অঞ্চলটি ‘সাবসারফেস জোন’ নামে পরিচিত, যেখানে মাইক্রোবিয়াল বা জীবাণুর অস্তিত্ব থাকতে পারে। এছাড়াও, মঙ্গল গ্রহের উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত অ্যাসিডালিয়া প্লানিটিয়া সমভূমিটি প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার প্রশস্ত। এই এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মিথেন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া, যাদের মিথানোজেন বলা হয়, সেখানে থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে। মিথানোজেন এমন একটি অণুজীব, যা মিথেন গ্যাস উৎপাদন করে এবং সাধারণত অক্সিজেনের অভাবে বেঁচে থাকে।
মঙ্গল গ্রহে গবেষণা নিয়ে নতুন দিগন্ত
মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে জীবাণুর অস্তিত্বের সম্ভাবনা যাচাই করতে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA) ২০২৮ সালে রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন রোভার পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এই রোভারটি মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে ৭ ফুট (২.১ মিটার) ড্রিল করবে। এর মাধ্যমে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে মিথেনের উপস্থিতি সম্পর্কে চলমান বিতর্কের সমাধান হতে পারে। মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কিত এই গবেষণাটি আমাদের মহাকাশে জীবনের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের দিকে এক নতুন পদক্ষেপ। এটি শুধু মঙ্গল গ্রহের জন্যই নয়, বরং পৃথিবীর বাইরের অন্য গ্রহেও জীবন অনুসন্ধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করতে পারে। গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে মহাকাশযান ও রোভার পাঠানোর মাধ্যমে আরও গভীর তথ্য পাওয়া যাবে, যা আমাদের জানার দিগন্ত আরও বিস্তৃত করবে।
জীবাণুর অস্তিত্বের সম্ভাবনা কীভাবে জানা যাবে
মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানী মঙ্গল গ্রহে পাঠানো মহাকাশযান ও রোভারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, মঙ্গল গ্রহের গহ্বরে জীবাণু টিকে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে পারে। গবেষকরা ধারণা করছেন যে, মঙ্গল গ্রহের অতীতের উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশ জীবাণুর জন্য উপযোগী ছিল এবং এখনো কিছু জীবাণু সেই পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে থাকা জীবাণু, যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা শুধু মঙ্গল গ্রহের ইতিহাসকেই নয়, পৃথিবীর বাইরের অন্য গ্রহগুলিতে জীবন অনুসন্ধানেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
মঙ্গল গ্রহে এখন অতি ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক পরিবেশ রয়েছে, তবে অতীতে মঙ্গল গ্রহে বেশ উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশ ছিল। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, সেখানে এক সময়ে বিশাল সমুদ্র, নদী এবং হ্রদ ছিল, যা প্রাণের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই পরিবেশের কারণে মঙ্গল গ্রহে জীবাণু থাকতে পারত। বিশেষভাবে, মিথানোজেন জাতীয় অণুজীবের জন্য মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচের গহ্বরের পরিবেশ উপযুক্ত হতে পারে।
ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের সম্ভাবনা
যদিও মঙ্গল গ্রহে জীবাণুর উপস্থিতি এখনো প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু ভবিষ্যতে পাঠানো মহাকাশযানগুলি এই বিষয়ে নতুন তথ্য সরবরাহ করতে পারে। ২০২৮ সালে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন রোভার মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হবে। এটি মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে সাত ফুট ড্রিল করবে এবং সেখান থেকে জীবাণু বা অণুজীবের উপস্থিতির প্রমাণ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। মঙ্গল গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব থাকা বা না থাকার বিষয়টি মহাকাশ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভবিষ্যতে আরো গবেষণার মাধ্যমে আমরা হয়তো মঙ্গল গ্রহের অতীত এবং সেখানে জীবন থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানব।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর
মঙ্গল গ্রহে জীবাণু থাকতে পারে কেন?
মঙ্গল গ্রহের অতীতের উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশে জীবন থাকার সম্ভাবনা ছিল। বর্তমানেও কিছু বিশেষ জীবাণু, যেমন মিথানোজেন, পৃষ্ঠের নিচে টিকে থাকতে পারে।
মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে জীবন টিকে থাকার পরিবেশ কেমন?
মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতে কী ধরনের অভিযান হবে?
২০২৮ সালে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি একটি রোভার পাঠাবে, যা মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে ড্রিল করবে এবং জীবন সংক্রান্ত নতুন তথ্য সংগ্রহ করবে।
DISCLAIMER
এই আর্টিকেলে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা সমস্ত নির্ভুল তথ্য দিয়েছি। কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগের জন্য [email protected] মেইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।