৮ বছর পর সুখবর পেলো সিটিসেল সিম! জানুন এবং অন্যকে জানান।

Written by Bikrom Das

Published on:

৮ বছর পর বাংলাদেশে সুখবর পেলো সিটিসেল সিম। বাংলাদেশের মোবাইল যোগাযোগের ইতিহাসে সিটিসেল একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। এটি দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে ১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। তখন এর নাম ছিল বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল)। পরবর্তীতে মালিকানার হাতবদলের মাধ্যমে এটি সিটিসেল নামে পরিচিতি লাভ করে। সিটিসেল এক সময় দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর হলেও বর্তমানে এটি বাজার থেকে পুরোপুরি উধাও। তবে দীর্ঘ আট বছর পর প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় লাইসেন্স ফিরে পেতে আবেদন করেছে, যা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সিটিসেল সিম এর উত্থান ও পতন

সিটিসেল ছিল বাংলাদেশের মোবাইল যোগাযোগ শিল্পের অগ্রগামী। এটি কোড-ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস (সিডিএমএ) প্রযুক্তি ব্যবহার করত, যা তৎকালীন সময়ে বেশ আধুনিক ছিল। অন্যদিকে, বর্তমানে জনপ্রিয় জিএসএম প্রযুক্তি সিম কার্ড ব্যবহার করে থাকে। সিডিএমএর ক্ষেত্রে প্রতিটি হ্যান্ডসেট নির্দিষ্ট একটি নম্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকত, যা ব্যবহারে কিছুটা সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করত।

২০১০ সালের দিকে সিটিসেলের প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহক ছিল। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি এবং নতুন প্রতিযোগীদের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৬ সালের মধ্যে তাদের গ্রাহক সংখ্যা কমে মাত্র ৫ লাখ ৫৯ হাজারে নেমে আসে। এর পরপরই ২০১৭ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সিটিসেলের তরঙ্গ বন্ধ করে দেয়। মূলত, ২১৮ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

সিটিসেলের দাবি এবং বর্তমান পরিস্থিতি

সিটিসেলের মূল কোম্পানি প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (পিবিটিএল) দাবি করেছে, তাদের লাইসেন্স বাতিলের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, তারা একটি ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলের’ সঙ্গে যুক্ত থাকায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। সিটিসেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের তরঙ্গ বন্ধ করার পর থেকে ব্যাংক ঋণ, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং কর্মচারীদের বেতনসহ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন:  গ্রামীণফোনে ৫জিবি ইন্টারনেট মাত্র ১০৮ টাকা

প্রতিষ্ঠানটি আরও দাবি করেছে, তাদের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকারের প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা কর ও ফি আদায় হয়নি। এর পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। তারা লাইসেন্স ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তি নিরপেক্ষ লাইসেন্সও দাবি করেছে, যাতে ফাইভ-জি প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

সিটিসেলের দাবি নিয়ে বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার জানিয়েছেন, সিটিসেলের আবেদন নিয়ে কমিশনের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে। তবে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিটিসেলের লাইসেন্স ফিরে পেতে আইনগত দিকগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সিটিসেল যদি পুনরায় লাইসেন্স পায়, তবে তারা নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। এজন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন ডিভাইস, আধুনিক প্রযুক্তিপণ্য এবং দক্ষ লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে বাজারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার লক্ষ্য তাদের। পাশাপাশি, বিটিআরসির বকেয়া পাওনা পরিশোধের বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সিটিসেলের পতন থেকে অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং গ্রাহকদের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চলতে পারলে যে বাজার হারাতে হয়, সিটিসেল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে মোবাইল যোগাযোগ শিল্পে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। দেশে এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তির প্রবর্তন চলছে। এ অবস্থায় সিটিসেল পুনরায় কার্যক্রম শুরু করলে প্রতিযোগিতার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি এবং গ্রাহকসেবার মান বাড়াতে হবে।

সারমর্ম

সিটিসেলের পুনরায় লাইসেন্স পেতে চাওয়ার ঘটনা শুধু একটি মোবাইল অপারেটরের ফিরে আসার প্রচেষ্টা নয়, এটি দেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পের একটি বড় অধ্যায়। প্রতিষ্ঠানটি সফলভাবে ফিরতে পারলে এটি শুধু তাদের জন্য নয়, পুরো টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হতে পারে। তবে সিটিসেলের দাবি ও বিটিআরসির অবস্থান নিয়ে যে আইনি ও নীতিগত জটিলতা রয়েছে, তা নিরসন হওয়া জরুরি। সময়ই বলে দেবে, সিটিসেল আবারও গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে পারবে কি না। আমাদের তথ্যগুলো পড়তে ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য তথ্য পড়বেন।

আরও পড়ুন:  সিটিসেল আবারও ফিরছে! ২৫ পয়সা কলরেটে সাশ্রয়ী সুবিধা নিয়ে!
Bikrom Das

আমি বহু-বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছি। আমি বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, টেলিকম, টেকনোলজি, জীবনধারা, ধর্ম এবং জাতি নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে লেখালেখি করে থাকি। আমার লেখাগুলো তথ্যবহুল, পাঠকের কাছে সহজবোধ্য এবং সমসাময়িক। Mymensingh, Bangladesh.