2025 Saraswati Puja Date: হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর সেই তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম হলো সরস্বতী পুজো। এ দিনটি বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সরস্বতী দেবী হলেন জ্ঞান, শিল্প ও বিদ্যার দেবী। বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে এ দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আয়োজনে পালিত হয়। ২০২৫ সালে, সরস্বতী পুজো ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
2025 Saraswati Puja Date
২০২৫ সালে সরস্বতী পূজা পড়েছে ২ ফেব্রুয়ারি, যা মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে। সরস্বতী পুজোর শুভ সময় শুরু হবে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯:১৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬:৫২ মিনিটে। তবে, এই পুজোতে সবচেয়ে শুভ মুহূর্তটি হচ্ছে সকাল ৯:১৪ মিনিট থেকে ১২:৩৫ পর্যন্ত, যেখানে প্রায় ৩ ঘণ্টা ২৬ মিনিটের সময়কালের মধ্যে ভগবতি সরস্বতীর পূজা করতে সবচেয়ে ফলপ্রসূ মনে করা হয়।
সরস্বতী পুজো বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে একটি বিশেষ দিন, যেখানে শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য উপাসনা করা হয়। পুজো মন্ত্র ও রীতির মধ্যে এই সময় দেবী সরস্বতীর কাছে শিক্ষার আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়, যাতে পড়াশোনা ও জীবনের বিভিন্ন দিক সহজে সিদ্ধি লাভ করে।
সরস্বতী পূজার উপকরণ
সরস্বতী পুজোর জন্য প্রস্তুতি শুরু হয় আগের দিন থেকেই। পুজো উপলক্ষে মন্দির বা মণ্ডপ সাজানো হয় নানা রঙিন ফুল, মালা ও অন্যান্য সাজসজ্জায়। সাদা, হলুদ, বাসন্তী রঙের ফুল এই পুজোর জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, ভগবতী সরস্বতীর প্রিয় ফল হিসেবে কুল খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পুজোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট উপকরণও থাকে। দেবী সরস্বতীর প্রিয় নৈবেদ্য হল সাদা চাল, কুমকুম, হলুদ, পলাশ ফুল এবং অন্যান্য প্রসাদ। এই উপকরণগুলোর মধ্যে কুল এবং পলাশ ফুল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পলাশ ফুল দেবীর পায়ে অর্পণ করলে বিশেষভাবে আশীর্বাদ পাওয়া যায় বলে পুরাণে উল্লেখ আছে।
সরস্বতী পূজার দিনে দেবী সরস্বতীর অঞ্জলি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এ সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। প্রথমেই, শুদ্ধ বস্ত্রে সজ্জিত হয়ে স্নান সেরে পুজো শুরু করা উচিত। এরপর, সকালে দেবী সরস্বতীর মন্ত্র পাঠ করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রের উল্লেখ করা হলো।
- “জয় জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগ-শোভিত মুক্তাহারে। বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে।“
- “ঔঁ ভদ্রকালৈ নমো নিত্যং সরস্বতৈ নমো নমঃ। বেদ-বেদান্ত বেদাঙ্গ-বিদ্যাস্থানেভ্যঃ এব চ। এষ স-চন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ঔঁ ঐং শ্রী শ্রী সরস্বতৈ নমঃ।“
এই মন্ত্রগুলি পাঠ করে পুজো শুরু করলে, জ্ঞান এবং শিক্ষায় উন্নতি লাভ করা যায়।
আরও পড়ুন– ধর্ম ও জাতি সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়ুন।
সরস্বতী পুজোর দিন শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
সরস্বতী পুজোর দিনটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অর্থপূর্ণ। এই দিনে তারা তাদের বইপত্র, বীণা এবং কলম সরস্বতী দেবীর পায়ে অর্পণ করে আশীর্বাদ নেন। অনেকেই এদিন উপোস থাকেন এবং নতুন পোশাক পরেন। এতে একদিকে শুদ্ধতা ও অন্যদিকে, দেবীর প্রতি ভক্তি প্রকাশিত হয়।
পুজোর দিন সাধারণত স্কুল, কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়। শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করে আনন্দিত হয় এবং তাদের বিদ্যাশক্তি বৃদ্ধি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
সরস্বতী পুজো শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আমাদের সংস্কৃতিতে সরস্বতী পুজো একটা সময় ছিল সামাজিক মিলনমেলার একটি উপলক্ষ। গ্রামে-গঞ্জে ছোট-বড় সবাই একত্রিত হয়ে এ দিনটি আনন্দের সঙ্গে পালন করত।
এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো উদযাপন একটি পুরনো প্রথা। বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জ্ঞানমূলক দিক তুলে ধরে। এতে নতুন কিছু শেখার সুযোগও থাকে, বিশেষত শিল্পকলা, সংগীত এবং নৃত্যে।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, যদি কেউ সরস্বতী পুজোর সময়ে তার বইপত্র অর্পণ করে, তা হলে তার জীবনে জ্ঞান এবং শিক্ষায় উন্নতি আসে। এর সাথে, শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো ফল পায় এবং জীবনে সফল হয়, এই দোয়া করতে হয় দেবী সরস্বতীর কাছে।
সরস্বতী পুজো ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই দিনটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি শিক্ষা এবং সংস্কৃতি উদযাপন। সরস্বতী দেবীর আরাধনা করার সময়, বিশেষভাবে মন্ত্র পাঠ, নৈবেদ্য এবং অন্যান্য শুভ কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
এদিন, জ্ঞানী এবং শিক্ষার্থীরা দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ পেতে চাইবে, যাতে তাদের অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রম ফলপ্রসূ হয়। সরস্বতী পুজোর শুভ মুহূর্তে উপাসনা করার মাধ্যমে একদিকে জীবনের সাফল্য লাভ করা সম্ভব, অন্যদিকে শুদ্ধ মন ও দেহ দিয়ে জীবনের সকল বিপত্তি কাটিয়ে ওঠা যায়।