কার্যকরী ভাবে শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় 

Written by WhatsUpBD Desk

Published on:

দুর্বলতা! কথাটা শুনলেই কেমন যেন শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসে, তাই না? এনার্জি কমে গেলে কোনো কিছুতেই মন বসে না। কিন্তু জানেন কি, একটু চেষ্টা করলেই এই দুর্বলতাকে গুডবাই বলা যায়? আসুন, আজ আমরা জেনে নিই কিভাবে শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে এনার্জি ফিরে পাওয়া যায়। এই ব্লগ পোষ্টে শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় A টু Z টিপস নিয়ে আলোচনা করা হবে।

শরীর দুর্বল কেন লাগে?

মূলত শরীর দুর্বল লাগার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। শারীরিক, মানসিক, এবং জীবনযাত্রার কিছু ভুল আমাদের দুর্বল করে দেয়। প্রথমেই যদি শরীর দুর্বল লাগার কারণ গুলো খুঁজে বের করা যায়, তাহলে সমাধান করা সহজ হবে। আসুন এক নজরে কারণ গুলো দেখে নেয়া যাক। 

  • শারীরিক কারণ

ঘুমের অভাব: ঘুম শরীরের জন্য খুবই দরকারি। কম ঘুম হলে শরীর তার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পায় না, ফলে দুর্বল লাগে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে কর্মক্ষমতা প্রায় ২০-৩০% কমে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

অপুষ্টি: শরীরকে ভালোভাবে চালানোর জন্য দরকার সঠিক পরিমাণে পুষ্টি। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস – এই সবকিছু ঠিকমতো না পেলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। অনেকেই আছেন, যারা ফাস্ট ফুড খেয়ে পেট ভরায়, কিন্তু শরীরে পুষ্টির অভাব থেকে যায়।

রোগ: কিছু রোগ যেমন অ্যানিমিয়া (রক্তশূন্যতা), ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদি দুর্বলতার কারণ হতে পারে। এসব রোগ শরীরে এনার্জি তৈরিতে বাধা দেয়।

  • মানসিক কারণ

স্ট্রেস: অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আমাদের শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। স্ট্রেসের কারণে ঘুম কমে যায়, খাবার হজম হতে সমস্যা হয়, এবং শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়।

দুশ্চিন্তা: দুশ্চিন্তা করলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা দুর্বলতার কারণ হতে পারে। সারাক্ষণ কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়।

ডিপ্রেশন: ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা একটা বড় কারণ হতে পারে দুর্বলতার। ডিপ্রেশনে ভুগলে কোনো কিছু করতে ভালো লাগে না, শরীর নিস্তেজ হয়ে থাকে।

  • জীবনযাত্রার কারণ

অতিরিক্ত পরিশ্রম: যারা খুব বেশি পরিশ্রম করেন, তাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের কারণে দুর্বল লাগতে পারে।

ব্যায়াম না করা: ব্যায়াম না করলে শরীর অলস হয়ে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং এনার্জি লেভেল উন্নত হয়।

অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড: ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব হয়। এগুলোতে ফ্যাট এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

খাবারের মাধ্যমে শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায়

সঠিক খাবার আমাদের শরীরকে শক্তি যোগায় এবং দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। কিছু খাবার আছে, যেগুলো নিয়মিত খেলে আপনি দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

প্রোটিন: প্রোটিন শরীরের জন্য খুবই জরুরি। এটা শরীরের কোষ তৈরি করতে এবং মেরামত করতে সাহায্য করে। ডিম, দুধ, ডাল, মাছ, মাংস – এগুলো প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। বডিওয়েট অনুযায়ী এই পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।

ভিটামিন: ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স – এগুলো শরীরের জন্য খুব দরকারি। ভিটামিন সি এর জন্য কমলা, লেবু, মাল্টা, কাঁচামরিচ, লেটুস পাতা খান। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে। অন্যদিকে, ভিটামিন ডি এর জন্য ডিমের কুসুম, মাছ, দুধ খেতে পারেন। সূর্যের আলোতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ রোদে থাকুন।

মিনারেলস: আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম – এগুলো শরীরের দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। তাই আয়রনের জন্য কচু শাক, পালং শাক, কলিজা খেতে পারেন। আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। অন্যদিকে, ক্যালসিয়ামের জন্য দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ খান। কেননা এগুলো ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁত মজবুত করে।

হেলদি ফ্যাট: আপনি জানেন কি প্রতিদিন ২০-৩৫% ক্যালোরি ফ্যাট থেকে আসা উচিত। এক্ষেত্রে বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল – এগুলো শরীরের জন্য ভালো ফ্যাট, এগুলো গ্রহণ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে ফ্যাট যেন হেলদি হয়।

উপরে উল্লেখ্যিত খাবার ছাড়াও এখানে কিছু খাবারের তালিকা এবং তাদের উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

খাবারউপকারিতা
ডিমপ্রোটিন এবং ভিটামিন ডি এর উৎস, যা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
পালং শাকআয়রন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ, যা রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে।
বাদামহেলদি ফ্যাট এবং ম্যাগনেসিয়ামের উৎস, যা দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে।
কমলা ও লেবুভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দুর্বলতা কমায়।
দইপ্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরে শক্তি যোগায়।

লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় 

শুধু খাবার নয়, আমাদের লাইফস্টাইলেও কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। সঠিক লাইফস্টাইল আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন: 

পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করুন, আর একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। ঘুমের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করুন এবং একটি শান্ত ও অন্ধকার ঘরে ঘুমান।

ব্যায়াম: হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, যোগা, সাঁতার – এগুলো শরীরকে সচল রাখে। প্রতিদিন ৩০ মিনিটের ব্যায়াম শরীরকে অনেক রোগ থেকে দূরে রাখে। ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে, যা দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে।

পানি: দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। সবসময় একটা পানির বোতল সাথে রাখুন। পানি শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচায় এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল রাখে।

স্ট্রেস কমানো: মেডিটেশন, রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করে স্ট্রেস কমানো যায়। এক্ষেত্রে পছন্দের কাজগুলো করুন কিংবা বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। তাছাড়া গান শোনা, বই পড়া, বা সিনেমা দেখার মাধ্যমেও স্ট্রেস কমানো যায়।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন? (ডাক্তার কখন জরুরি?)

কখনো কখনো দুর্বলতা সাধারণ কারণে হয়, যা ঘরোয়া উপায়েই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে আপনার ধারণা থাকা উচিৎ যে কোন সময় বা কোন স্টেজে দুর্বলতা পৌছালে ডাক্তার দেখানো উচিৎ। নিম্মে এমন কিছু কন্ডিশন সম্পর্কে জানানো হলো: 

  • দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা: যদি দুর্বলতা অনেক দিন ধরে থাকে এবং কোনো কিছুতেই না কমে।
  • অন্যান্য লক্ষণ: যদি দুর্বলতার সাথে জ্বর, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট থাকে।
  • কোনো উন্নতি না হলে: লাইফস্টাইল পরিবর্তনের পরেও যদি দুর্বলতা না কমে।

যদি আপনি দেখেন যে আপনার দুর্বলতা দিন দিন বাড়ছে, এবং এর সাথে অন্য কোনো শারীরিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তবে প্রাথমিক ভাবে নিম্মে কিছু সাপ্লিমেন্টস এর নাম দেওয়া হলো (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী):

সাপ্লিমেন্টউপকারিতাসতর্কতা
ভিটামিন ডিহাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বেশি ডোজ গ্রহণ করা উচিত নয়।
আয়রনরক্তশূন্যতা কমাতে এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করে।কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটে অস্বস্তি হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ম্যাগনেসিয়ামমাংসপেশীর কার্যকারিতা এবং স্নায়ুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ডায়রিয়া হতে পারে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সএনার্জি লেভেল বাড়াতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে।

সতর্কবার্তা: কোনো সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কার্যকরী ভাবে শরীরের দুর্বলতা কাটানোর জন্য উপায় 

দুর্বলতা কমাতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন খুবই জরুরি। তাই এখানে কিছু “Do’s and Don’ts” দেওয়া হলো, যা আপনাকে সাহায্য করবে শরীরের দুর্বলতা কাটাতে:

✅ Do’s❌ Don’ts
প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা করুন।ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড পরিহার করুন।
নিয়মিত ফল ও সবজি খান।অতিরিক্ত চিনি ও লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন।অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
সময়মতো ঘুমান এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।দীর্ঘ সময় ধরে বসে বা শুয়ে থাকবেন না।
মানসিক চাপ কমাতে শখের কাজ করুন।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

শারীরিক দুর্বলতা একটা সাধারণ সমস্যা হলেও, এটা অবহেলা করা উচিত না। সঠিক খাবার, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনি অবশ্যই শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে পারবেন এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন। 

আপনার যদি শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায়  নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন! দুর্বলতাকে জয় করে, জীবনকে উপভোগ করুন! যদি আপনার মনে হয় এই “ব্লগ পোষ্ট” টি দরকারি, তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

WhatsUpBD Desk আমরা অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত লেখক টিম, যারা বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, জীবনধারা, টেকনোলজি, টেলিকম, ধর্ম ও জাতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করে থাকি। তথ্যনির্ভর এবং পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে তারা পাঠকদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেই।

রিলেটেড পোষ্ট

Thanks for watching! Content unlocked for this session.