রমজান মাস, রহমতের মাস। এই মাসে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় রোজা রাখি। কিন্তু রোজার সময় অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মনে দ্বিধা তৈরি হয়। এই যেমন- যাদের চোখের সমস্যা বা কোনো কারণে চোখে ড্রপ দিতে হবে। এম সিচুয়েশনে “রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে কিনা” – এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দেয়।
তাই আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কুরআন হাদিসের আলোকে ইসলামিক স্কোলার্স এবং আলেমদের মতামতের পেক্ষিতে জানার চেষ্টা করবো রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে কিনা! যেন আপনার মনে এই বিষয়ে আর কোনো দ্বিধা না থাকে।
রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে কিনা?
কুরআনে সরাসরি চোখের ড্রপ নিয়ে কিছু বলা না থাকলেও, রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো সংযম। দিনের বেলা পানাহার ও শারীরিক চাহিদা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। তাহলে এবার হাদিসের আলোকে আলেমরা যে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন, সেগুলো জেনে নেয়া যাক।
অধিকাংশ আলেমের মতামত:
অধিকাংশ আলেমের মতে, চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভাঙে না। কারণ, চোখের ড্রপ পেটে যায় না এবং এটি খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয় না।
বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শামীম আহমেদ বলেন, “চোখের ড্রপ systemic circulation-এ যায় না, তাই রোজার কোনো ক্ষতি করে না।”
কিছু আলেমের ভিন্নমত:
তবে কিছু আলেমের মতে, যদি ড্রপের স্বাদ গলায় অনুভব হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু এই মতটি দুর্বল।
ইসলামী ফিকহ ও ফতোয়া:
ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী, চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভাঙবে না, যদি না ড্রপের কোনো অংশ খাদ্যনালী দিয়ে পেটে প্রবেশ করে। ফতোয়ার কিতাবগুলোতেও এর সমর্থন পাওয়া যায়।
চোখের ড্রপ ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা
রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার সময় কিছু নিয়ম ও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন
- ড্রপ দেওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
- চোখের নিচের পাতা সামান্য টেনে ড্রপ দিন।
- ড্রপ দেওয়ার পর চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ রাখুন, যাতে ড্রপ ভালোভাবে মিশে যায়।
মনে রাখবেন, ড্রপ দেওয়ার সময় গলায় যদি কোনো তিক্ত স্বাদ পান, তাহলে কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
চোখে ড্রপ দেয়া নিয়ে আলেমদের মতামত
দেশের অনেক স্বনামধন্য মুফতি বলেছেন, “চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভাঙে না। কারণ, এটি খাদ্যনালী দিয়ে পেটে প্রবেশ করে না।”
তাছাড়া অন্যান্য ইসলামিক স্কলারদের মতে, “চোখের ড্রপ রোজার পরিপন্থী নয়। তবে যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে দিনের বেলা ড্রপ ব্যবহার না করে ইফতারের পরে ব্যবহার করা ভালো।”
রোজা কেন্দ্রিক খুব প্রচলিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
১) চোখে ড্রপ দিলে কি রোজা ভেঙে যায়?
সাধারণত, চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভাঙে না। তবে ড্রপের স্বাদ যদি গলায় অনুভব হয়, তাহলে কুলি করে নেওয়া ভালো।
২) রোজার সময় কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যাবে কি?
হ্যাঁ, রোজার সময় কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যায়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
৩) চোখে সুরমা লাগালে কি রোজা ভাঙে?
অধিকাংশ আলেমের মতে, চোখে সুরমা লাগালে রোজা ভাঙে না।
৪) রোজা অবস্থায় চোখের অপারেশন করা যাবে কি?
হ্যাঁ, রোজা অবস্থায় চোখের অপারেশন করা যায়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অপারেশনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৫) চোখে কাজল দিলে কি রোজা ভাঙে?
চোখে কাজল দিলে রোজা ভাঙে না, কারণ এটা পেটে যায় না।
৬) তাহলে রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো কী কী?
রোজার পবিত্রতা রক্ষায় আমাদের অবশ্যই রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানতে হবে।
- খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ
ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়।
- ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন
ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করলে রোজা ভেঙে যায়।
- জেনে শুনে বমি করা
ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা ভেঙে যায়। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোজা ভাঙে না।
- মাসিক ও সন্তান প্রসব
নারীদের মাসিক হলে এবং সন্তান প্রসবের পর রোজা ভেঙে যায়।
রমজানে চোখের যত্ন কিভাবে নিবেন?
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম
রমজানে তারাবির নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের কারণে ঘুমের অভাব হতে পারে। তাই চোখের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন।
- কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে চোখের উপর চাপ পড়তে পারে। তাই মাঝে মাঝে বিরতি নিন এবং চোখের ব্যায়াম করুন।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
ইফতার ও সেহরিতে চোখের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার চোখের জন্য খুবই উপকারী।
চুড়ান্ত মন্তব্য
রোজা একটি পবিত্র ইবাদত। তাই রোজার সময় যে কোনো কাজ করার আগে আমাদের ইসলামিক বিধান জানা জরুরি। “রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে কিনা” – এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা জানতে পারলাম যে, চোখে ড্রপ দিলে সাধারণত রোজা ভাঙে না। তবে ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে চলুন, আমরা সবাই আল্লাহর রহমত লাভ করি।
যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার সুস্থ ও সুন্দর রমজান কাটুক, এই কামনাই করি।