ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে কি হবে জেনে নিন

Written by WhatsUpBD Desk

Updated on:

রমজান মাস! রহমত, বরকত আর মাগফেরাতের মাস। এই মাসে প্রতিটি মুসলিমের উপর রোজা রাখা ফরজ। কিন্তু, মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনে এমন কিছু পরিস্থিতি আসতেই পারে, যখন আমরা হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা রাখতে পারলাম না। তখন মনে নানা প্রশ্ন জাগে, ‘ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে কি হবে? এর consequences কি? আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?’ আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব, কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানার চেষ্টা করব যেন আপনার মনে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান।

ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখার ভয়াবহতা

ইসলামের দৃষ্টিতে, রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি অবশ্য পালনীয় বিধান। যারা সুস্থ ও সক্ষম, তাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কারণ ছাড়াই, শুধুমাত্র অলসতা বা অবহেলার কারণে রোজা না রাখে, তবে তা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

কুরআনের আলোকে

কুরআনে আল্লাহ তাআলা রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক আয়াতে উল্লেখ করেছেন। সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।”

হাদিসের আলোকে

হাদিসে রোজার গুরুত্ব এবং ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা না রাখার consequences সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো ওজর (shariah-সম্মত কারণ) ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভাঙে, সে যদি সারা জীবনও রোজা রাখে, তবুও সেই একটি রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।” (তিরমিজি)

ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে করণীয়

যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা রাখতে না পারে, তবে তার জন্য ইসলামে কিছু বিধান রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা না রাখলে এর প্রায়শ্চিত্ত করা কঠিন। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে:

আরও পড়ুন:  রাধা রানীর ১০৮ নাম বাংলা | রাধার প্রণাম মন্ত্র

তাওবা করা

প্রথম এবং প্রধান কাজ হল আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তাওবা করা। অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার প্রতিজ্ঞা করা উচিত।

কাজা করা

ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করলে, এর কাজা করা জরুরি। অর্থাৎ, রমজান মাস শেষ হওয়ার পর ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে।

কাফফারা দেওয়া

কিছু আলেম মনে করেন, ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গের ক্ষেত্রে কাফফারা দেওয়া আবশ্যক। কাফফারা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে খাদ্য দেওয়া অথবা একটি গোলাম আজাদ করা।

আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা

সবকিছুর পরেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি যদি চান, তবে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

যেসব কারণে রোজা না রাখা যায় (শরিয়তসম্মত কারণ)

ইসলামে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে সেই পরিস্থিতিগুলো অবশ্যই শরিয়তসম্মত হতে হবে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ আলোচনা করা হলো:

অসুস্থতা

যদি কোনো ব্যক্তি এমন অসুস্থ হয়, যার কারণে রোজা রাখলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে সুস্থ হওয়ার পর সেই রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে।

ভ্রমণ

ইসলামে মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখার অবকাশ আছে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, ভ্রমণটি শরিয়তসম্মত হতে হবে এবং নির্দিষ্ট দূরত্বের বেশি হতে হবে।

মহিলাদের বিশেষ অবস্থা

মহিলাদের মাসিক (পিরিয়ড) চলাকালীন এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী সময়ে রোজা রাখা নিষেধ। এই সময়ে রোজা না রেখে, পরবর্তীতে কাজা আদায় করতে হয়।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা

গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা যদি রোজা রাখার কারণে নিজের বা সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তবে তাদের জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। পরবর্তীতে তারা এর কাজা আদায় করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:  রাম নবমী কি এবং রাম নবমী মাহাত্ম্য কী? জানতে পড়ুন

রোজা না রাখলে কাফফারা কি?

যদি কেউ শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া রোজা না রাখে, তবে তাকে কাফফারা দিতে হয়। কাফফারার নিয়মগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • একটি রোজা ভঙ্গের কাফফারা: একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে ভরপেট খাওয়ানো অথবা ফিতরা হিসেবে যে পরিমাণ খাদ্য দেওয়া হয়, সেই পরিমাণ খাদ্য দান করা।
  • ক্রমাগত রোজা রাখা: যদি খাদ্য দান করতে অক্ষম হন, তবে लगातार দুই মাস রোজা রাখতে হবে।
  • গোলাম আজাদ করা: পূর্বে এই বিধান ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি প্রযোজ্য নয়।

কাফফারার পরিমাণ

ইসলামিক পণ্ডিতদের মতে, একটি রোজার কাফফারা হলো একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এক দিনের জন্য ভরপেট খাওয়ানো অথবা পৌনে দুই কেজি গম বা তার সমমূল্যের অর্থ দান করা।

রোজা বিষয়ক কিছু জরুরি মাসআলা

  • রোজা অবস্থায় ভুল করে কিছু খেলে: যদি কেউ ভুল করে কিছু খেয়ে ফেলে, তবে তার রোজা ভাঙবে না। তবে মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
  • ইনজেকশন বা স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙে কি? সাধারণ ইনজেকশন বা স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙে না। তবে যদি খাবারের বিকল্প হিসেবে কিছু নেওয়া হয়, তবে রোজা ভেঙে যেতে পারে।
  • মুখে থুথু জমিয়ে গিলে ফেললে রোজা ভাঙে কি? মুখের থুথু গিলে ফেললে রোজা ভাঙে না।

শেষ কথা

ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে কি হবে, তা নিয়ে আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। রমজান মাস আমাদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি, সেই চেষ্টা করা উচিত। যদি কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারি, তবে দ্রুত তাওবা করে এর কাজা আদায় করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

FAQ (Frequently Asked Questions)

প্রশ্ন ১: ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে কি গুনাহ হয়?

উত্তর: হ্যাঁ, ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখা একটি বড় গুনাহ। এটি আল্লাহ তাআলার নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করা এবং রোজার কাজা আদায় করা জরুরি।

আরও পড়ুন:  রোজা অবস্থায় ইনজেকশন দেয়া যাবে কিনা?

প্রশ্ন ২: অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে না পারলে কি করতে হবে?

উত্তর: অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে না পারলে, সুস্থ হওয়ার পর সেই রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে। যদি এমন হয় যে, কখনো সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে প্রত্যেক রোজার জন্য একজন দরিদ্রকে খাদ্য দিতে হবে।

প্রশ্ন ৩: মহিলারা মাসিক অবস্থায় রোজা রাখতে না পারলে কি করবেন?

উত্তর: মহিলারা মাসিক অবস্থায় রোজা রাখতে পারবেন না। এই সময়ে রোজা না রেখে, পরবর্তীতে কাজা আদায় করতে হবে।

প্রশ্ন ৪: কাজা রোজা কিভাবে আদায় করতে হয়?

উত্তর: রমজান মাস শেষ হওয়ার পর যেকোনো সময় কাজা রোজা আদায় করা যায়। তবে যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে নেওয়া ভালো।

প্রশ্ন ৫: কাফফারা কিভাবে দিতে হয়?

উত্তর: কাফফারা হিসেবে একজন দরিদ্রকে ভরপেট খাওয়াতে হয় অথবা ফিতরার সমপরিমাণ অর্থ দান করতে হয়।

প্রশ্ন ৬: রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবে কি?

উত্তর: রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট ব্যবহার করা মাকরূহ। তবে যদি পেস্ট গিলে না ফেলেন, তবে রোজা ভাঙবে না।

প্রশ্ন ৭: রোজার নিয়ত কখন করতে হয়?

উত্তর: রোজার নিয়ত সাধারণত সেহরির সময় করতে হয়। তবে যেকোনো কারণে সেহরি খেতে না পারলে, দিনের বেলায় দ্বিপ্রহরের আগে নিয়ত করা যায়।

প্রশ্ন ৮: তারাবির নামাজ কি ফরজ?

উত্তর: তারাবির নামাজ ফরজ নয়, এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তবে এর অনেক ফজিলত রয়েছে।

প্রশ্ন ৯: ইতিকাফ কি?

উত্তর: ইতিকাফ হলো রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত করা। এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া।

WhatsUpBD Desk আমরা অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত লেখক টিম, যারা বাজার দর, রোজগার, অটোমোবাইল, জীবনধারা, টেকনোলজি, টেলিকম, ধর্ম ও জাতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করে থাকি। তথ্যনির্ভর এবং পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে তারা পাঠকদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেই।