অধ্যবসায় রচনা শিখুন সহজ ভাষায়, সকল শ্রেণীর জন্য

Written by WhatsUpBD Desk

Published on:

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

অধ্যবসায় রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা শিক্ষার্থীদের তাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে। এটি তাদের দক্ষতা এবং জ্ঞান প্রয়োগ করার একটি প্ল্যাটফর্মও প্রদান করে যা তাদের ভবিষ্যতের পেশাগত জীবনে সফল হতে সাহায্য করবে। আর তাই আপনাদের পড়ার সুবিধার জন্য Oddhaboshay Rochona নিয়ে এলাম।

সূচিপত্র

অধ্যবসায় রচনার ২০ পয়েন্ট (অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট)

ভূমিকা:

সময়ের সঙ্গে জীবন, জীবনের সঙ্গে কর্ম ও অধ্যবসায় একই বিনিসুতোর মালায় গাঁথা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না। এ পৃথিবীতে যে-কোনো কাজ করতে গেলে সফলতা ও বিফলতা উভয় প্রকার ঘটনাই ঘটতে পারে।অধ্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি। অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে উন্নতির আশা কল্পনা মাত্র।

“কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?”

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

অধ্যবসায় কী ও এর বৈশিষ্ট্য:

মানুষ জীবনকে সাজাতে চায়,সফল করতে চায় কিন্তু জীবনের পথ খুব সহজ নয়।জীবনের সব কাজই সহজে সমাধা হয় না।অনেক কাজেই প্রথমবারে সফলতা আসে না।এমনকি পরের বারও সফলতা নাও আসতে পারে।কিন্তু এতে হতাশ হলে চলবে না।বার বার চেষ্টা করতে হয়।তাতে এক সময় না একসময় সাফল্য আসবে।সাফল্য লাভের এই প্রয়াসই অধ্যবসায়। এই ধারণাকে কবি ফুইয়ে তুলেছেন প্রবাদতুল্য একটি কবিতায়,

‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর

পারো কি না পারো করো যতন আবার।

একবার না পারিলে দেখ শতবার।’

কোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়।অধ্যবসায় হচ্ছে কতিপয় গুণের সমষ্টি।চেষ্টা, উদ্যোগ, আন্তরিকতা, পরিশ্রম, ধৈর্য ইত্যাদি গুণের সমন্বয়ে অধ্যবসায় পরিপূর্ণতা লাভ করে।মনের আস্থা ও বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপদানের জন্যে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্য দিয়ে ঈস্পিত লক্ষ্যে পৌছানোর মধ্যেই অধ্যবসায়ের সার্থকতা নিহিত। বিশ্ববিখ্যাত মিথ লেখক কামু তাঁর ‘মিথ অফ সিসিকাস’-এর সূচনা করেছেন এভাবে,দেখা যাচ্ছে,এই কাহিনীর নায়ক ভারী একখানা পাথর বয়ে তুলছে পাহাড়ের ওপর,কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তা পরে যাচ্ছে শতশত ফিট নিচে।আবার তাকে তুলতে হচ্ছে। এই রা নির্ধারিত শাস্তি।কিন্তু হতোদ্যম হয়নি সে। এভাবে যতোবার তুলছে এই ভারী পাথরখণ্ড ততোবারই তা আবার নিচে পরে যাচ্ছে। সত্য বট,এই সফলতাহীন কাজে কোনো আনন্দ নেই,সুখ নেই।কিন্তু ‘ মিথ অফ সিসিকাসের’ নায়ক পরাভবকে স্বীকার করে না,যতবার পরে যায় ততবার সে টেনে তোলে সেই পাথরখণ্ড।এই যার সাধনা ও অধ্যবসায় সেই মানুষ কি কখনো হারতে পারে? বর্তমান পৃথিবীর মানুষও এই অবিরাম অব্যাহত প্রয়াস ও উদ্যমকেই বেছে নিয়েছে।তার অধ্যবসায়ের ব্লেই সফল তাকে হতে হবে।সফল সে হচ্ছেও।জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, নৈপুণ্যে, দক্ষতায়, শিল্পে, সাহিত্যে, সঙ্গীতে, ক্রীড়ায়, আবিষ্কারে, উদ্ভাবনে।সে তার অধ্যবসায়ের গুণে,শ্রম ও সাধনায় আলোকিত,বিকশিত,উদ্ভাসিত করছে পৃথিবী!পৃথিবীর এই উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে অনেক বছরের নিরলস অধ্যবসায়।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা: 

মানবসভ্যতার মূলে রয়েছে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা।মানবজীবনের যেসব গুণ জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তুলতে পারে তার মধ্যে অধ্যবসায় হলো অন্যতম।মানবজীবনের যেকোনো কাজে বাধা আসতে পারে, কিন্তু সে বাধাকে ভয় করলে চলবে না, কেননা ‘জীবনের সমস্যাকে এড়িয়ে যাবার অর্থ হচ্ছে, জীবনকে অস্বীকার করা’ (জন লিলি)।রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন দিনের আলো এসে দেখা দেয়,ঠিক তেমনি বারবার অবিরাম চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের শুকতারা!অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড় হয়, অসাধ্য সাধন করতে পারে।সকল ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।বিশ্বাস, মেধা, সুযোগ কোনো কিছুই চূড়ান্ত সার্থকতা এনে দিতে পারে না যদি না তাদেএ যথার্থ প্রয়োগে অধ্যবসায়কেই মুখ্য করে তোলা হয়।সংসারে প্রতিটি মানুষ্পকে তার জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে অসংখ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে  সংগ্রাম করতে হয়।একমাত্র অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই এয়াওব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভবপর!নিজেকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে এবং দেশ, জাতি ও বৃহত্তর মানবসমাজের জন্যে তাকে কিছু-না-কিছু অভদান রাখতে হয়।এ ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।যে অধ্যবসায়ী নয় মনের দিক থেকে সে পঙ্গু!ফলে সমাজে তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়!বস্তুত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।নৈরাশ্য বা ব্যর্থতাকে জয় করার প্রধান উপায় হচ্ছে অধ্যবসায়-“Failure is the pillar of success”

অধ্যবসায়ের উদাহরণ: 

জগতে যত বপড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক রয়েছেন তাঁদের সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী।ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে তার দৃষ্টান্ত!মহাকবি ফেরদৌসি দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে রচনা করেছিলেন অমর মহাকাব্য ‘শাহনামা‘।জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস বিশ বছরের একক প্রচেষ্টায় রচপ্না করেন এক লক্ষ পনের হাজার শব্দ সংবলিত ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান।’ আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নিজের চেষ্টা ও সাধনায় দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে সংগ্রহ করেছিলেন দু’হাজার প্রাচীন পুঁথি, যার ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রায় চারশ বছরের ইতিহাসের অজানা অধ্যায় উদঘাটিত হয়! ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে  বেরোয় জনসনের বিখ্যাত অভিধান ‘এ ডিকশনারি অফ দি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ‘ যাকে ইংরেজ জাতি গ্রহণ করে এক মহৎ কীর্তিরূপে: ফরাসিরা যা সম্পন্ন করেছে অ্যাকাডেমির সাহায্যে ইংরেজ তা করেছে এক ব্যক্তির শ্রমে-মেধায়, এ তৃপ্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাষার মানরূপ শনাক্তির জন্যে অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠার সমস্ত স্বপ্ন ত্যাগ করে ইংরেজ।মনীষী কার্লাইল অনেক বছরের শ্রমে ফরাসি বিপ্লবের এক অসামান্য ইতিহাস লিখেছিলেন।এ সবই অধ্যবসায়ের ফসল! স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস অধ্যবসায়ের আর এক জীবন্ত উদাহরণ। অগণিত ইংরেজ সৈন্যের সঙ্গে পুনঃপুন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েও রবার্ট ব্রুস ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করার বাসনা ও চেষ্টা পরিত্যাগ করেন নি। বরং একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ের ফলে তিনি যুদ্ধে জয়ী হন। এমনিভাবে স্যার ওয়াল্টার স্কট এর মতাে ব্যক্তি বার বার ব্যর্থ হয়েও অধ্যবসায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর প্রথম জীবনে পিতৃরাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে অসহায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি অদম্য অধ্যবসায়ের বলে আফগানিস্তানের সম্রাট ও সমগ্র ভারতবর্ষের অধীশ্বর হয়েছিলেন। সম্রাট বাবরের পিতা তৈমুর লঙও ছিলেন অধ্যবসায়ের মূর্ত প্রতীক। প্রবল অধ্যবসায়ের দ্বারাই তিনি নিজের আয়ত্বে আনেন এশিয়া ও ইউরােপের একাংশ। মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন নিজেই স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্ন শ্রম। নেপােলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, ‘Impossible is a word, which is only found in the dictionary of fools.

আরও পড়ুন:  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা পড়ুন সহজ বাংলায় | Doinondin Jibone Biggan Rochona

অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ: 

জীবনসংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র হচ্ছে, অধ্যবসায়। অর্ধ পৃথিবীর অধীশ্বর নেপােলিয়ন তার জীবনকর্মের মধ্য দিয়ে রেখে গেছেন অধ্যবসায়ের অপূর্ব নিদর্শন। কোনাে কাজকে তিনি অসম্ভব বলে মনে করতেন না। তাই তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হতে পেরেছিলেন। শুধু অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ মনীষী বিশ্বখ্যাত হয়েছেন। পক্ষান্তরে, অধ্যবসায়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় জীবনও অকালে ঝরে যায়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জগতের কোনো কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে না। তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অধ্যবসায়ীকে কখনােই অসহিষ্ণু হলে চলবে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের যােগ্যতাকে অর্জন করা যেমন সম্ভব তেমনি যােগ্যতার বলে অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়াও বিচিত্র নয়। এক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে জরুরি তা হচ্ছে নিজের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা। তাই অধ্যবসায়ী হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করে কবি বলেছেনঃ

‘ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো!বাঁধো বাঁধো বুক,/শত দিকে শত দুঃখ আসুক আসুক।’

জীবনে দুঃখ আছে, গ্লানি আছে, পরাজয় আছে, ব্যর্থতা আছে, কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়!মানুষ তার উদ্যম ও প্রচেষ্টা দিয়ে এই ব্যর্থতাকে জয় করেছে।জয় করে চলেছে।মানুষের এই জয়ের ইতিহাসই বর্তমান পৃথিবীর চিত্র! 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেনঃ

‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে 

আগুন জ্বালো,আগুন জ্বালো,আগুন জ্বালো।’

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ

বিধাতা প্রত্যেক মানুষকেই প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিভাকে বিকশিত করার বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন। মানবজীবনের এই সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে হলে অধ্যবসায়ের কোনাে বিকল্প নেই। অনেকের ধারণা— অসাধারণ প্রতিভা ছাড়া কোনাে বড় কাজে সফলতা সম্ভব নয়। কিন্তু অসাধারণ প্রতিভা ছাড়াও নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা যে কোনাে কাজে জয়যুক্ত হওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেছেন-‘আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে দুরূহ তত্ত্বগুলাের রহস্য আমি ধরতে পেরেছি।’ ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন- ‘প্রতিতা বলে কিছুই নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও,তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।‘ ডালটন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম  ছাড়া কিছুই জানি না।‘ তাই প্রতিভা লাভ করতে হলে অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়ােজন, এবং প্রতিভাকে অধ্যবসায়ের গুণে কাজে লাগাতে হবে, অন্যথায় সে-প্রতিভা কোনাে কাজে আসবে না।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ 

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। ছাত্রজীবন আর অধ্যবসায় মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ! বিদ্যার্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রী কখনও বিদ্যালাভে সফলতা অর্জন করতে পারে না। একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। কাজেই অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অধ্যবসায়ে মনােনিবেশ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, 

”কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন

হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।”

শুধু অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ 

মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে দূর করেছ আঁধার,বিমান আবিষ্কার করে জয় করেছে আকাশ, রকেটের সাহায্যে অর্জন করছে চন্দ্র বিজয়ের গৌরব। আর এসব সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে মানুষের যুগ যুগান্তরের সাধনা, তার অবিরাম অধ্যবসায়। বর্তমান সভ্যতার যুগে মানুষ নিজ নিজ কৃষ্টি ও সভ্যতা অর্জন করতে চায়, পৌছতে চায় সভ্যতার চরম শিখরে!কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় তা সহযে হয়ে ওঠে না।কোনো সভ্যতাই একদিনে গড়ে ওঠে নি। বার বার চেষ্টা ও সাধনার দ্বারা পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সৃষ্টির প্রথম মানবগােষ্ঠীর সভ্যতাও স্তরে স্তরে গড়ে উঠেছে।বস্তুত সামগ্রিকভাবে একটি জাতির সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য সকল নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন।পৃথিবীর বুকে তখনই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ সম্ভব যখন জাতীয় উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে সবাই সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ ক্রবে।তাই জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম!

অধ্যবসায় ও উন্নত বিশ্বঃ 

উন্নত বিশ্ব আজ অধ্যবসায়ের বলে সাফল্যের চরম শিখরে পৌছেছে। মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র কেবল অধ্যবসায়ের গুণেই উন্নতির শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে।

অধ্যবসায় ও বাঙালি জাতি ও আমাদের কর্তব্যঃ 

আমরা বাঙালি জাতি। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে, আমাদের অনেকের মধ্যে অধ্যবসায়ের মহৎ গুণটি অনুপস্থিত। আমাদের মধ্যে নেই কোনাে প্রচেষ্টা, নেই কোনাে উদ্যম, কোনাে আগ্রহ। বরং আছে আস্ফালন, হুঙ্কার, গরিমা ও নিজেকে প্রকাশ করার মিথ্যে বাহাদুরি। কেবল অধ্যবসায়ের অভাবে আজ আমরা এত পিছিয়ে আছি। জাতি হিসেবে আমরা তাই অনুন্নত। সুতরাং আর একটি মুহূর্তও বিলম্ব না করে নিজেদের অধ্যবসায়ী রূপে গড়ে তােলা খুবই জরুরি। আজ থেকে শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার / সেথা হতে সবে আনে উপহার”, আজ সেই দুয়ার আরাে বেশি খােলা। আমরা যদি পেছনে পড়ে থাকি, উদ্বুদ্ধ না হই, উদ্যোগ গ্রহণ না করি সে হবে আমাদের ব্যর্থতা। আর ব্যর্থতার দায়ও আমাদেরই বহন করতে হবে। বহন করতেও হচ্ছে। উন্নত দেশের তুলনায় আমরা দরিদ্র থেকে আরাে দরিদ্র হচ্ছি, বাড়ছে আমাদের এই সংখ্যা, বেকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হচ্ছে চার কোটি পৌনে চার কোটি। আমরা কেন পেছনে পড়ে থাকব? আমরা কেন উঠে দাড়াবাে না? দুঃখ-দারিদ্র্যের এই অনিঃশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা কতাে নিষ্পেষিত হতে থাকব? এই বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির যুগে, পৃথিবীর এই সাফল্য ও সমৃদ্ধির যুগে এই দুর্দশা ও দুরবস্থা কোনাে সম্মান বা গৌরবের বিষয় নয়। উন্নতির জন্য চাই সাধনা। নিরলস সাধনা, অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ও শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা শ্রম ও সাধনার কথা ভুলে যাই। 

“কাটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে /

দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?” 

এই সত্য আমরা প্রায়শই মনে রাখি না। ফলে উন্নতির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। এ যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করে এ যুগে উন্নতি সম্ভব নয়। উন্নতি ও সাফল্য অর্জনের জন্য অসম্ভব বা অস্বাভাবিক কিছু করার প্রয়ােজন নেই। যার যেটুকু সাধ্য তার মধ্যদিয়ে আমরা উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি। ক্ষুদ্র মাটির প্রদীপও রাত্রির গভীর অন্ধকার দূর করে। এই সাধ্য ও সাধনা দিয়েই সবকিছু করা সম্ভব। সাধ্যমতাে চেষ্টা করলে, অধ্যবসায়ী হলে, সাধ্যমতাে উদ্যোগ নিলে, নিজের সাধ্য বা সামর্থ্যকে কাজে লাগালেই সমাজে অনেক বড় বড় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। কিন্তু এই সাধ্যেরই সদ্ব্যবহার আমরা করি না। সাধ্য থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা নিষ্ক্রিয় ও উদ্যোগহীন। সব মানুষই কিছু কিছু পারে, কিছু কিছু পারে না। এই পারা, না-পরা নিয়েই মানুষ।আর এই নিয়েই তাকে শ্রম, সাধনা ও অধ্যবসায় করতে হয়। অধ্যবসায়ই তার পথ, এগিয়ে যাওয়ার পথ। পৃথিবীর সঙ্গে এভাবেই সে এগিয়ে যায়, অধ্যবসায়ের গুণে।

উপসংহার:

মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন‘ অধ্যবসায় সম্পর্কিত একটি পরম সত্য প্রবাদ। যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয়, সে জীবনের কোনাে সাধারণ কাজেও সফলতা লাভ করতে পারে না। জীবনের সফলতা এবং বিফলতা অধ্যবসায়ের ওপরই নির্ভর করে, তাই আমাদের সকলের উচিত অধ্যবসায়ের মতাে মহৎ গুণটিকে আয়ত্ত করা, পরশপাথরের মতাে এই পাথরটিকে ছুঁয়ে দেখা এবং সােনার কাঠির মতাে একে অর্জন করা। মনে রাখতে হবে, অধ্যবসায়ই জীবন, জীবনই  অধ্যবসায়!

অধ্যবসায় রচনা class 10

অধ্যবসায় রচনা ১০ম শ্রেণী (class 10)

ভূমিকাঃ

কোনাে কাজে একবার ব্যর্থ হলে তাতে সফলতা লাভ করার জন্য বারবার চেষ্টা বা সাধনা করার নামই অধ্যবসায়। মূলত অধ্যবসায় হলাে কতিপয় গুণের সমষ্টি। পরিশ্রম, ধৈর্য, আন্তরিকতা ইত্যাদি গুণের সমন্বয়ে অধ্যবসায় পূর্ণতা লাভ করে। আবার মনের আস্থা ও বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপদানের জন্য সুদৃঢ় সংকল্প নিয়ে পরিশ্রম করাকে ও চেষ্টার পুনরাবৃত্তিকে অধ্যবসায় বলে । সুখদুঃখ, উত্থান-পতন, ব্যর্থতা-সফলতা এগুলাে সাপেক্ষ পদ। অর্থাৎ একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। বাস্তব জীবনে ব্যর্থতা ও সফলতা পাশাপাশি অবস্থান করে এবং একটির পর অপরটি ক্রমান্বয়ে আসে। তাই কোনাে কাজে বিফল হলে তাঁতে হাল না ছেড়ে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, ‘Life means struggle‘ আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই একদিন সফলতার চরম শিখরে আরােহণ করা সম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন–

কোনাে কাজ ধরে যদি উত্তম সে জন।

হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন। 

অধ্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি। অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে উন্নতির আশা কল্পনা মাত্র । তাই জীবনে বড়ো হতে হলে আমাদের সবাইকে অধ্যবসায়ী হতে হবে। 

আরও পড়ুন:  আমাদের বিদ্যালয় রচনা সহজ ভাষায় | Class: 3,4,5,6

অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তাঃ

মানবসভ্যতার মূলে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা রয়েছে। মানবজীবনের যেকোনাে কাজে ব্যর্থতা আসতে পারে, কিন্তু সে বাধাকে ভয় পেয়ে বসে থাকলে চলবে না। কারণ জীবনের সমস্যাকে এড়িয়ে যাবার অর্থ হলাে, জীবনকে অস্বীকার করা। রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন দিনের আলাে এসে দেখা দেয় তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও ব্যর্থতার পরে আসে সফলতা। সকল ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়কে অন্যতম চারিত্রিক গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যথার্থ অধ্যবসায় না থাকলে বা এর যথার্থ প্রয়ােগ না হলে বিশ্বাস, মেধা বা সুযােগ কোনােকিছুই চূড়ান্ত সার্থকতা এনে দিতে পারে না। মানুষকে জীবনে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে নানা প্রতিকূলতা মােকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে হয়। মানুষের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানাের জন্য প্রয়ােজন অধ্যবসায় । তাছাড়া নিজেকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তােলার জন্য অধ্যবসায়ের কোনাে বিকল্প নেই। যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয় সে মনের দিক থেকে পঙ্গু। ফলে তার দ্বারা সমাজের কোনাে উন্নতি হয় না। প্রকৃতপক্ষে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। নৈরাশ্য ও ব্যর্থতাকে জয় করার প্রধান উপায় হচ্ছে অধ্যবসায়। কথায় আছে ‘Failure is the pillar of success‘। বিশ্ববিখ্যাত মিথ লেখক আলবেয়ার কামু তাঁর ‘মিথ অফ সিসিফাস‘ গ্রন্থে দেখিয়েছেন, নায়ক একটি ভারী পাথর পাহাড়ের উপরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পাথরটি বারবার শত শত ফিট নিচে পড়ে যাচ্ছে। আবার তাকে সেই পাথর উপরে তুলতে হচ্ছে। এই ছিল তার নির্ধারিত শাস্তি। কিন্তু তারপরও সে দমে যায়নি। পাথরখণ্ডটি যতবার নিচে পড়ে যাচ্ছে, পুনরায় তা উপরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। একথা সত্য যে, সফলতাহীন কাজে কোনাে সুখ নেই, আনন্দ নেই। কিন্তু নায়ক পরাজয়কে স্বীকার না করে, যতবার পড়ে যায় ততবারই পাথরখণ্ডটি টেনে তােলে। এরূপ অধ্যবসায় ও সাধনা যার মধ্যে আছে সে কখনাে হারতে পারে না। তেমনি পৃথিবীর মানুষ এমন। অদম্য ও অবিরাম অব্যাহত প্রয়াসকেই বেছে নিয়েছে। প্রবল অধ্যবসায়ের বলেই তাদের সফল হতে হবে। 

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ

অধ্যবসায় ব্যক্তিজীবনেও সফলতা এনে দিতে পারে। ব্যক্তিজীবনের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য বুদ্ধির বিকাশ, সুদৃঢ় সংকল্প ও কাজের প্রতি আগ্রহ থাকা প্রয়ােজন। এগুলাে ছাড়া জীবনে কোনাে কিছুই অর্জন করা সহজ নয়। তাই জীবনকে সুখময় ও সুনিয়ন্ত্রিত করার জন্য অধ্যবসায়ের গুরুত্ব রয়েছে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি তার জীবনের ঈপ্সিত ফল পেতে পারে। 

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ

ছাত্রজীবনে যে অধ্যবসায়ের প্রয়ােজন রয়েছে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানেই সফলতা চাই, সেখানেই অধ্যবসায়কে খোঁজ করতে হবে। যে ছাত্র একবার পরীক্ষায় ফেল করে দ্বিতীয়বার আর ফেলের ভয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে না, অধ্যবসায়ী হওয়ার চেষ্টা করে না, সে জীবনে কখনাে সফলতা লাভ করতে পারে না। ছাত্রদের জানা উচিত ছাত্ৰনং অধ্যয়নং তপঃ। তাদের আরও জানা উচিত ‘Diligence is the mother of good luck‘ (Franklin)। অনেকে মনে। করেন যারা জীবনে বড়াে হয়েছে তারা অত্যন্ত মেধাবী ও অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। প্রতিভা কারও একচেটিয়া অধিকার নয়। তা সকলেরই থাকে, তবে একে যথাযথ কাজে লাগাতে হয়।  এ সম্পর্কে ডাল্টনের কথা স্মরণযােগ্য, ‘লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না। আবার ভলতেয়ার বলেছেন, প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।’ জীবন যুদ্ধে সফলতার মূল চাবি যে অধ্যবসায় তা ইতিহাসের পাতা উলটালে সহজেই প্রতীয়মান হয়। বিজ্ঞানী নিউটন বলেন, ‘আমি সারা জীবন শুধু সমুদ্র তীরের বালু নুড়ি নিয়েই খেলা করেছি, সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আর দেখা হয়নি।‘ উক্তিটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাঁর অধ্যবসায়ের দৌড় কতটুকু ছিল। নেপােলিয়ান জীবনে অসম্ভব বলে কিছু জানতেন না। তাই তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘Impossible is a word found in the dictionary of the fools‘,তার সেদিনের সে উক্তি ও সফলতা তার অদম্য অধ্যবসায়ের ফসল। আর এরকম দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় অসংখ্য। তাই বােঝা যায়, জীবনে সফল হতে হলে অধ্যবসায়ী হওয়া একান্তভাবে আবশ্যক। 

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ত্বঃ

জাতির উন্নয়নের জন্য সকল জনগণকে অধ্যবসায়ী হতে হবে । সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টাই একটি জাতিকে উন্নতির দ্বারে এগিয়ে নিতে পারে। বর্তমানে যেসব জাতি উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে, তা সম্ভব হয়েছে কেবল অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের কারণে। পূর্বের ইতিহাস তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অধ্যবসায়ী হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

অধ্যবসায়ের প্রতিবন্ধকতাঃ

অধ্যবসায়ের মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আলস্য। এছাড়াও সৎসাহস ও মনােসংযােগের অভাব অধ্যবসায়ের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আলস্য, সৎসাহস ও মনােসংযােগের অভাবে মানুষ সাধনায় নিমগ্ন হতে পারে না। অধ্যবসায়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা ইচ্ছা থাকলেই কোনাে না কোনাে উপায় বের হয়ে আসে। কেবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমেই মানুষ প্রতিকূল পরিবেশকে অনুকূলে আনতে পারে । 

অধ্যবসায়ই সাফল্যের চাবিকাঠিঃ

যেকোনাে কাজে সফলতা অর্জনের জন্য চাই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া কোনাে কাজে সফল হওয়া যায় না। ইতিহাসের পাতায় যারা আজও অমর হয়ে আছেন, তারা অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই সফল হতে পেরেছিলেন। তারা ব্যর্থতাকে জয় করে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়কেই জীবনের একমাত্র অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে বিষন্ন মনে বন-জঙ্গলে ঘুরছিলেন। তখন একদিন এক গুহায় একটি মাকড়সাকে সাতবার চেষ্টা করে সুতা জড়াতে দেখে তিনি অদম্য উৎসাহ নিয়ে সপ্তমবারের মতাে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেন। আবার মহাকবি ফেরদৌসী দীর্ঘ তিরিশ বছর সাধনা করে রচনা করেন অমর মহাকাব্য ‘শাহানামা’ তেমনি আমরা দেখি মহানাব হজরত মুহম্মদ (সা.) ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে বহুবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এমনকি রক্তাক্ত পর্যন্ত হয়েছেন। তারপরও তিনি নতুন উদ্যমে ধর্মপ্রচার করে বিপথগামীদের ধর্মের পথে ফিরিয়ে এনেছেন। তাই বলা যায়, একমাত্র অধ্যবসায়ই মানবজীবনে সােনালি অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। 

আরও পড়ুন:  সত্যবাদিতা রচনা সকল শ্রেনীর জন্য, পড়ুন এবং পড়ান

উপসংহারঃ

অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনে জয়ী হওয়া যায়। তাই সাফল্য নামক সােনার হরিণের জন্য আমাদের সকলকে অধ্যবসায়ী হতে হবে। জীবনে একবার সফলতা আসলে আর পিছ পা হতে হয় না। এ সম্পর্কে Nicolas Chamfort এর উক্তিটি স্মরণীয় ‘Success makes success or money makes money.‘ ইতিহাস থেকে জানা যায় পৃথিবীর অধিকাংশ জ্ঞানী-গুণী, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতরা ছিলেন চাষাভুষা, শ্রমিক, দর্জি, মুচি প্রমুখ গরিব লােকের সন্তান। তারা আজ এত বড়াে হয়েছেন, শুধু অধ্যবসায়ের।

অধ্যবসায় রচনা ১৫ পয়েন্ট

অধ্যবসায় রচনা ১৫ পয়েন্ট

সূচনা: 

সাফল্য লাভের জন্যে বার বার চেষ্টা বা সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায়। অন্তহীন সংগ্রামের ইতিহাসে অধ্যবসায়ী মানুষ চিরস্মরণীয়। জীবনের বিকাশের মূলে রয়েছে যে অভিব্যক্তিবাদ বা বিবর্তনবাদ, তা সেই সংগ্রামেরই কাহিনি। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে আজ অন্যতম মানবিক গুণ হচ্ছে অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ পৃথিবী থেকে অসম্ভব কথাটি বিতাড়িত করেছে।

অধ্যবসায় কী: 

অধ্যবসায় শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অবিরাম সাধনা। কোনো কাজে সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ধারণের মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়। মূলত অধ্যবসায় হলো কিছু গুণের সমষ্টি। উদ্যম, উদ্যোগ, নিরন্তর কর্মপ্রচেষ্টা আর আন্তরিকতার মাধ্যমে অধ্যবসায় পরিপূর্ণতা পায়।

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা: 

মানবজীবনের সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার অধ্যবসায়। সংগ্রামে জয় আছে, পরাজয় আছে। কিন্তু পরাজয়ই শেষ কথা নয়, পরাজয় হচ্ছে জয়েরই পথিকৃৎ। অতএব ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো, বাঁধো বাধো বুক।’ বার বার চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে সাফল্যের ধ্রুবতারা ওঠে। অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড়ো হয়, অসাধ্য সাধন করতে পারে। জগতে বড় বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। তাই মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে অধ্যবসায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ছাত্রজীবনেও সফলতা অর্জনে অধ্যবসায়ের মূল্য অপরিসীম। গভীর আত্মপ্রত্যয় সহকারে অবিরাম অনুশীলন করলে দুরূহ বিষয়ও আয়ত্তে এসে যায়। এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবিচল অধ্যবসায় মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেয়।

মানবজীবনে অধ্যবসায়: 

সভ্যতার সেই অস্ফুট মুহূর্ত থেকে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, আজও তা শেষ হয়নি। এ সংগ্রামই মানুষের অভিজ্ঞানপত্র। জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে প্রয়োজন সাহস ও অধ্যবসায়। এ শক্তিই মানুষের মহৎ চারিত্রিক লক্ষণ। দুর্বলচিত্ত মানুষ কখনো অধ্যবসায়ী হতে পারে না। কারণে-অকারণে সামান্য প্রতিকূল আঘাতেই তার ধৈর্যচ্যূতি ঘটে। যারা দৃঢ়চিত্ত, অধ্যবসায় তাদেরই চরিত্রের মহৎ মানবিক গুণ। শান্ত চিত্তে প্রতিকূলতাকে জয় করার মূলে আছে অধ্যবসায়। অন্য সকল মানবিক সদগুণের মতোই জীবনে অধ্যবসায়েরও সযত্ন লালন, পরিচর্যা প্রয়োজন। নিরন্তর অনুশীলনেই এ বৃত্তির বিকাশ ঘটে।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়: 

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজন সর্বাধিক। ছাত্ররা সমাজের ভাবী গৌরবকেতন। বিশ্বের কোটি কোটি বঞ্চিত ভাগ্যাহত মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অল্প মেধাশক্তিসম্পন্ন হলেও অধ্যবসায়ী ছাত্র সাফল্য লাভ করতে পারে। কাজেই অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে অধ্যয়নে মনোনিবেশ করতে হবে। কারণ অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে।

অধ্যবসায় ও প্রতিভা: 

অধ্যবসায় প্রতিভার চেয়েও শ্রেয়। অনেকে প্রতিভাকে সফলতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ভুল ধারণা। কেননা প্রতিভাবান ব্যক্তি উদ্যমহীন হয়ে বসে থাকলে কখনোই সাফল্য লাভে সক্ষম হবে না। অধ্যবসায়ের জোরেই মানুষের প্রতিভার সঠিক প্রকাশ ঘটে। অধ্যবসায় ছাড়া তাই প্রতিভা অর্থহীন। বিশ্বের বিখ্যাত অনেক মনীষী তাঁদের সাফল্যের মূলে প্রতিভা নয়, বরং নিরলস পরিশ্রমকেই চিহ্নিত করেছেন। মনীষী ভলতেয়ারের ভাষায়, ‘প্রতিভা বলে কোনো কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।

দৃষ্টান্ত: 

অধ্যবসায়ী ব্যক্তি মানবজন্মকে সার্থক করে তোলেন। অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়েই তারা কর্মের পথে এগিয়ে যান অবিচল নিষ্ঠায়। ত্যাগে, ধৈর্যে তাঁরা মানুষের কাছে তুলে দিয়েছেন অমৃতের পাত্র। সেই নীলকণ্ঠ মহামানবের পুণ্য-স্পর্শে সাধারণ মানুষের জীবন ধন্য হয়েছে। রাজার দুলাল গৌতম বুদ্ধও একদিন জীবনের সত্য সন্ধান করতে গিয়ে সুখের স্বর্গ-সিংহাসন থেকে নেমে গিয়েছিলেন পথের ধুলোয়। প্রতিকূলতাকে তিনি জয় করেছিলেন অসীম ত্যাগ আর তিতিক্ষায়। অধ্যবসায়ই ছিল তাঁর সেদিনের মন্ত্র। মহানবি হযরত মুহম্মদ (স)-এর জীবনে দুঃখ-কষ্টের আঘাত কম ছিল না। সহনশীলতা মানুষের জীবনকে যে কী পরিমাণে সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত করতে পারে, তাঁদের জীবনই এর প্রমাণ। করুণা-সাগর বিদ্যাসাগরের সমুন্নত মহিমা, সহিষ্ণুতার আদর্শেই প্রোজ্জ্বল। এ ছাড়া সাহিত্য-শিল্প-বিজ্ঞান সাধনায়ও মানুষের অধ্যবসায়ের তুলনা নেই। ম্যাক্সিম গোর্কি, দস্তয়েভস্কি জীবনে কি কম দুঃখ পেয়েছিলেন? রবীন্দ্রনাথও কি কম নিন্দা-সমালোচনার শরবাণে জর্জরিত হয়েছিলেন? চরম দারিদ্র্য ও হতাশার মধ্যেও কত কবি-সাহিত্যিক সুন্দরের আরাধনা করে গেছেন। এমনই কত বিজ্ঞানীকেও বার বার অধ্যবসায়ের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ইংরেজদের সাথে পরপর ছয় বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে শত্রুর হাত থেকে স্বদেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন।

উপসংহার: 

অধ্যবসায়ই মানুষকে পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতে পারে। তাই আমাদের অধ্যবসায়ী হতে হবে। যারা সংকল্পে অটল, জীবন যাদের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ তাদের কাছে অসাধ্য কিছুই নেই। একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ নিজের জীবনকে সুষমামণ্ডিত করে দেশ ও জাতির কাছে স্মরণীয়-বরণীয় হতে পারে।

অধ্যবসায় রচনা class 8

এই ব্লগের শেষ কিছু কথা

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অধ্যবসায় অপরিহার্য। ছোটো-বড়ো সকল লক্ষ্য অর্জনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। অধ্যবসায়ী মানুষ কখনো হতাশ হয় না, বরং প্রতিকূলতাকেও ধৈর্য ও সাহসের সাথে মোকাবেলা করে। মনে রাখবেন, সাফল্যের পথ কখনোই মসৃণ হয় না। পথে নানা বাধা আসবে, হতাশার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু অধ্যবসায় হারিয়ে ফেললে জয় আসবে না। তাই আজই শুরু করুন। ছোটো ছোটো লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা অর্জনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকুন। নিয়মিত পরিশ্রম করুন, ধৈর্য ধরুন। দেখবেন, সাফল্য আপনারই হাতছানি করবে।

মনে রাখবেন:

  • লক্ষ্য স্থির করুন: স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে কাজ করতে সুবিধা হয়।
  • পরিকল্পনা করুন: লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী কী করতে হবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।
  • নিয়মিত পরিশ্রম করুন: প্রতিদিন কিছুক্ষণ সময় নিয়মিত কাজ করে যান।
  • ধৈর্য ধরুন: সাফল্য রাতারাতি আসে না। ধৈর্য ধরে কাজ করে যান।
  • প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করুন: পথে বাধা আসবে, হতাশ হবেন না। বরং সাহসের সাথে মোকাবেলা করুন।
  • নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন: নিজের প্রতি আস্থা থাকলে কাজ করা সহজ হয়।
  • অন্যদের থেকে অনুপ্রেরণা নিন: সফল মানুষদের জীবনী পড়ুন, তাদের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নিন।

শেষ কথা

অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই জীবনে সফলতা অর্জন সম্ভব। তাই আজই শুরু করুন আপনার অধ্যবসায়ের যাত্রা। শুভকামনা রইল।

এই রচনাগুলি পড়ুনঃ

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

DISCLAIMER

এই আর্টিকেলে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য যে আমরা সমস্ত নির্ভুল তথ্য দিয়েছি। কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিযোগের জন্য [email protected] মেইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপJoin Us
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলJoin Us
আমাদের ফেসবুক পেজFollow Us
আমাদের কোরা পেজFollow Us
গু নিউজে ফলো করুনFollow Us
WhatsUpBD Desk

Whatsupbd.com আমরা রিয়েলটাইম সঠিক তথ্য সরবরাহ করে থাকি। এখানে প্রযুক্তি, আজকের বাজারদর, সুস্থ জীবনধারা সম্পৃক্ত সকল জানা ও অজানা তথ্য আমরা এই প্লাটফর্মে প্রকাশ করে থাকি। আমাদের লক্ষ্য সবার মাঝে সঠিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।

রিলেটেড পোষ্ট

১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স ভর্তি ২০২৪ মেধা তালিকার ফল বাংলাদেশে এসির দাম কত আজকে | AC Price inBangladesh Janhvi Kapoor Latest Photo: Valentine’s Day তে যে পোশাক পড়লেন আমি আমার এসএসসি রেজাল্ট কিভাবে দেখব, সহজ নিয়ম কী?